চিনি – অমৃত গরল সংবাদ

  • by

চিনি (Sugar)- অমৃত গরল সংবাদ

ডাঃ শুভাগত চৌধুরী

দৈনন্দিন আহারে চিনির পরিমাণ কতটুকু হওয়া উচিত এ নিয়ে বেশ বিতর্ক হচ্ছে বিজ্ঞানী মহলে কিছুকাল ধরে। কোন কোন দেশে লোক বেশি চিনি ও মিষ্টি খাবার খান এ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা তাই সতর্ক হয়ে উঠেছেন।

চিনির পক্ষে বিপক্ষে লড়াইও বেশ জমে উঠেছে। দু পক্ষের প্রবক্তরাই বেশ জোরালো যুক্ত উপস্থাপন করেছেন। পক্ষের প্রবক্তরা বলেছেন শরীরে দ্রুত শক্তি জোগাতে চিনির জুড়ি নেই। বিপক্ষের লোকেরা বলেছেন, চিনি হল শুণ্য ক্যালরির নামান্তর।

শুধু মানুষ কেন, অন্য প্রাণীদেরও চিনির প্রতি আর্কষণ দূর্নিবার। গর্ভাবস্থায় জরায়ুতে সাকারিন ইনজেকশন দিল জরায়ুত স্যাকারিন  ইনজেকশন দিলে ফিটাস (ভ্রুণ) মিষ্ট অন্তভ্রুণাবরণের জন্য তরল পর্দার্থ (েএমনিওটিক ফ্লুইড) পান করা বাড়িয়ে দেয়। ইদুরকে যদি পুষ্টিকর খাদ্য এবং মিষ্টি পানি দুটোর মধ্যে পছন্দ করতে দেয়া যায় তাহলে ইদুর মিষ্টি পানিই পান করবে, পুষ্টিকর খাদ্য ছোবে না। অপুষ্ট হয়ে মরে গেলেও না।  এমন দেখা গেছে, কোন কোন দেশে চিনির দাম যখন ৫ ‍গুণ বেড়েছে তখনও চিনি খাওয়া কমেছে মাত্র ৭ শতাংশ। আমাদের দেশেও েএর ব্যতিক্রম নয়। চিনি খাওয়া কমেনি।

কোন কোন বিজ্ঞানী বলেছেন, সুস্বাস্থ্যের বড় শত্রু  হল চিনি। প্রায় েএক দশক আগে আমেরিকার পুষ্টি বিষয়ক সিনেট কমিটি কয়েকটি বৈজ্ঞানিক গবেষণালব্ধ তথ্যের উপর ভিত্তি করে জণগণকে চিনি খাওয়া ৪০ শতাংশ কমিয়ে দেবার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

প্রশ্ন হলঃ সুগার বা চিনি মানে কি? রাসায়নিকভাবে অনেকগুলো দ্রব্যকে চিনি নামে অভিহিত করা হলেও কেবল কতিপয় দ্রব্য আমাদের খাদ্যে বর্তমান। স্টার্চের মত চিনিও একটি শর্করা দ্রব্য। প্রকৃতিজাত চিনিগিুলোর মধ্যে রয়েছে লেকটোজ (দুগ্ধ শর্করা), সুক্রোজ (ইক্ষু বা বিট থেকে প্রস্তুত পাতে খাওয়া চিনি), গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ থাকে ফল ও সব্জিতে। এছাড়া রয়েছে ডেক্সট্রোজ, ম্যালটোজ ও গ্যলাকটোজ। রক্তে যে শর্করা থাকে তা হল গ্লুকোজ। খাদ্যে যে মিষ্টি দ্রব্য (সুইটেনার) যোগ করা হয় তা হল সুক্রোজ বা চিনি (ইক্ষু বা বিট সুগার) এবং কর্ণ সিরাপ।

বিজ্ঞানীদের অভিমত, শরীরে শকর্রর চাহিদা, আজকাল বিশেষত উন্নত দেশের লোকেরা মুলত চিনি দিয়েই মেটাচেছন অনেক ক্ষেত্রে। আমেরিকানরা মোট ক্যালোরির প্রায় ২০ শতাংশই খান চিনি। এতে অসুবিধা হচ্ছে এই, শর্করার অন্যান্য প্রকৃতিজাত উৎস থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকে। ফল, শাকসবজি, শস্য, ভাত, রুটি ইত্যাদিতে শর্করা ছাড়াও রয়েছে আশ ভিটামিন  এবং খনিজ দ্রব্য পরিশোধিত চিনি ক্যারোরিরই নামান্তর। বিজ্ঞানীরা বলেন, সুক্রোজ বা চিনির এমন কোন জরুরী শারীরবৃত্তিক চাহিদা নেই যা অন্য পুষ্টিদ্রব্য দ্বারা পূরণ করা যাবে না। দেহ যেমন স্টার্চ বা শ্বেত সার থেকে সুগার পেতে পারে, তেমনি তা পেতে পারে ফল ও সব্জি থেকে। অনেকে বলেন, দ্রুত শক্তির উৎস হল চিনি এ কথার ই কথা। এমনটি হয় বিরল পরিস্থিতিতে, যেমন ইনসুলিন শক ঘটলেই কেবল চিনি তেমন দায়িত্ব পালন করে।

খালি পেটে যদি চিনির ঘন দ্রবণ পান করেন তাহলে প্রায় আধ ঘন্টার মধ্যে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা যাবে বেড়ে, নিঃসৃত হবে ইনসুলিন, গ্লুকোজ, যকৃতে গ্লাইকোজেন রূপে জমা হবে চর্বি বা ট্রাইগ্লিসারাইড। ব্যায়ামের সময় শরীর দেহের গ্লাইকোজের সঞ্চায় থেকে গ্লুকোজ নেয়। ব্যায়ামের পূর্বে চিনি খেলে শরীর একে সঞ্চিত করে মাত্র। দীর্ঘ সময় শরীর চর্চার মধ্যে বাদ চিনি গ্রহণ করেন, তাহলেই কেবল রক্তশর্করা সরবারহ করবে।

চিনিরি পক্ষে যারা তাদের অভিযোগ হলঃ এমন বলা হয় যে পরিশোধিত সাদা চিনি ক্ষতিকর এবং স্বাভাবিক মিষ্টি দ্রব্যগুলো ভাল। কিন্তু একটি চিনি অনু তা পরিশোধিত হোক বা না হোক, তা চিনিরই অণূ। একথা যদিও সত্য যে টেবল সুগারে কোন ভিটামিন, খনিজ দ্রব্য বা প্রোটিন থাকে না, তবে ম পরিশোধি চিনি যেমন বাদামী চিনি বা মধুতেও এগুলো এত অল্প থাকে যে তা ধর্তব্যের মধ্যেই পড়ে না। বাদামী চিনি বা মধু খেতে ভাল লাগে খান, আপত্তি নেই। তবে এগুলো খেয়ে পুষ্টিকর জিনিস খাওয়া হল এমন ভাবাতক নয়।

চিনির বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ রয়েছে যেমন, তেমনি সে অভিযোগগুলো খন্ডনও করেছেন চিনি প্রেমিকরা।

প্রথম অভিযোগ হল ঃ মেদুস্থলতা। অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ করলে এমন ঘটে। উৎস যাই হোক না কেন। চিনির পক্ষে লোকজন বলেনঃ কারণটি হল ক্যালোরি, কোথা থেকে এল, তা বিচারের বিষয় নয়। যেমন প্রতি আউশ চর্বি থেকে যে ক্যালোরি পাওয়া যায় তা সমপরিমাণ শর্করা বা প্রোটিনের প্রায় দ্বিগুন। সুতারাং রুটির টুকরোতে পুরু মাখন লাগালে যে পরিমাণ ক্যালোরি পাওয়া যাবে তা সমপরিমাণ জেলির প্রায় দ্বিগুন। সুতারায় মোটা হওয়া ঠেকাতে গিয়ে চিনি পরিহার করলেন আথচ চর্বিযুক্ত খাবার ও তেল ভাজা বা তেলে চপ চপ খাবার খেলেন, এতে লাভ কি হল? চিনি বিরোধীরা বলেনঃ কথা ঠিক, তবে ব্যাপার হল, চিনি বা মিষ্ট দ্রব্য যেমন রসগোল্লা এতে চিনি আছে ঘনীভূত হয়ে। রসগোল্লা খেতে শুরু করলে অনেকে থামতেই চান না, সুতারায় পেট ভর্তি এমন অনুভুতির আগেই গপাগপ কয়েকটি রসগোল্লা পেটে চালান হয়ে গেছে। কয়টি খাওয়া হল, এমন হিসেবেও করেন না অনেকে। আর একটি উদাহারণ। আমরা জানি খাবার, খেতে যখন তৃপ্তি হয়, তখন আমরা থামি। এক পাউন্ড আপেল খেতে সময় লাগে অনেক অথচ একটি দু আউনসের কেনডি চকলেট এক নিমিষেই সাবাড় তৃপ্তির পরোয়া করার সময় কই। অথচ দুটোর ক্যালরির পরিমাণ এক।

দ্বিতীয় অভিযোগ হলঃ দন্তক্ষয়। চিনি অবশ্যই দাঁতের কেরিজ রোগ ঘটানো ত্বরানিত করে। মুখের ব্যাকটেরিয়া দন্তপৃষ্টের চিনি হজম করে, উৎপন্ন করে অলম্। সেই অল্ম সুরক্ষাকারী দাতের এনাকমেল নষ্ট করে এবং মাড়ির রোগ ঘটাতে সাহায্য করে। মজার ব্যাপার হলো, তাদের সংস্পর্শে চিনি কত সময় থাকে তাই গুরুত্বপূর্ণ, কতটুকু চিনি খাওয়া হল এক্ষেত্রে তা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। সুতারায় চকলেট চোষা এবং মিষ্টিদ্রব্য চোষা চিনির সরবত বা আইসক্রিমের তুলনায় বেশি ক্ষতিকর অন্তত দাঁতের তুলনায় বেশি ক্ষতিকর দাতের বেলায়। অতএব দন্তক্ষয় বা কেরিজ এড়াতে হলে যে কোন মিষ্ট ্রদব্য ভক্ষনের পর কুলি করুন এবং দাত ব্রাশ করুন। আহাারের মধ্যবর্তী সময় মিষ্টি খাওয়া পরিহার করুন। চিনি প্রেকিরা এসব যুক্তি খন্ডন করেছেন তাদের ভাষা হলঃ চিনি দাত নষ্ট করে সত্যি তবে এর বদলে প্রকৃতিজাত মধু বা শুকনো ফল খেলেই যে খুব সুসার হবে, তা নয়। মিষ্টি কত সময় দাতের সংস্পর্শে থাকল, তাই হল জরুরী বিষয়। মিষ্টি দ্রব্যট যত বেশি আঠালো হবে, দাতের সংস্পর্শে এটি থাকেবে তত বেশি সময়। সুতারাং একে এড়াতে হলে আহারের মর্ধবর্তী সময় আঠালো মিষ্টি খাওয়া চলবে না। দাঁতকে বারবার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মুখে য ব্যাকটেরিয়া রয়েছে  এটি মিষ্টির জাত বিচার করে না। বস্তুতপক্ষে কিছু কিছু তথাকথিত স্বাস্থ্যকর খাবার যমন কিসমিস, মনক্কা এগুলো দাঁতের মধ্যে সারাদিন স্বাস্থ্যন্দের সাথে থেকে ব্যাকটেরিয়ার সুবিধাই করে দেয়।

বহুমুত্র রোগ তৃতীয় অভিযোগ। বহুমুত্র রোগে অগ্ন্যাশয় পর্যাপ্ত ইনসুলিন নিঃসৃত করতে পারে না। রক্তের গ্লুকোজ তাই বেড়ে যায়। সুতারাং বহুমুত্র রোগীদেরকে অতিরিক্ত চিনি খেতে মানা করা হয় যাতে শর্করা মাত্রা খুব বেশি না হয়ে যায়।

এমন ধারণা রয়েছে যে, যেসব লোক বংশগত বহুমুত্র প্রবণ তাদের ক্ষেত্রে উচ্চ সুগারযুক্ত খাদ্য বহুমুত্র প্রবণ তাদের ক্ষেত্রে উচ্চ সুগারযুক্ত খাদ্য বহুমুত্র ‍সৃষ্টি করতে পারে। ইদুরের উপর পরীক্ষা চালিয়ে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। চিনির পখেষ যারা আছেন তাদের বক্তব্য হলঃ বহুমুত্র রোগে অগ্ন্যাশয় পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারে  না অথবা  ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না অথবা ইনসুলিন প্রস্তুত হলে তা সঠিকভাবে কার্যকর হতে পারে না।

সুগারযুক্ত খাবার খাওয়াই যে বহুমুত্র রোগের কারণ, এটি ঠিক নয়।

চতুর্থ হলঃ হৃদরোগ। এথারো সেক্লরোসিস এবং হৃদরোগ ঘটাতে চর্বি ও কোলেস্টেরলের ভূমিকা সর্বজনস্বীকৃত। তবে এমন মতামত অনেকে দিচ্ছেন যে উচ্চমাত্রার সুগারযুক্ত খাদ্যও এসব রোগ সংঘটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ কর পারে।

১৯৬৪ সালে জন ‍উডকন নামে একজন ইংরেজ চিকিৎসক এই তত্বের প্রবক্তা। তবে অন্যন্য দেশে অন্যান্য বিজ্ঞানীরা এ তত্বের পক্ষে উপযুক্ত প্রমাণ পাননি। যেমন ভেনিজুয়েলা, কিউবা, ব্রাজিল িএবং কোস্টাকিার লোকেরা খুব বেশি চিনি খায়, তাদের হৃদরোগ বেশি হয় এমন প্রমাণ নেই।

পঞ্চম অভিযোগঃ চিনি বেশি খেলে কোন কিছু শেখার ক্ষমতা কমে যায়। তবে চিনি প্রবক্তারা বলেন অনিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা, মতামত  এবং অনুমান আন্দাজের উপর ভিত্তি করেই এমন ধারণা প্রতিষ্ঠিত।

চিনি ‘গুণ্য ক্যালোরি’ এমন ধাররণারও বিপক্ষে আছেন অনেকে। সব ক্যালোরিই পূর্ণ ক্যালেরিই শক্তির উৎস। চিনিজাত দ্রব্য যদি অন্যন্য পুষ্টি দ্রব্যের পরিবর্তে খাওয়া হয়, তাহলে পুষ্টি ঘাটতি দেখা যায়। তবে দৈনিক ক্যালোরি ও পুষ্টিমান বজায় রাখলে স্ন্যাক খাবার খেতে দোষ কি ?

চিনির প্রবক্তরা তাই বলেন, চিনি মিষ্টি একথা সত্যি। এ জন্য আপনার জন্য মন্দ তা ঠিক নয়। বিপক্ষের লোক যারা তারা সত্য, উদঘাটনের চেষ্টা করতে চান। পরিশোধিত চিনির পক্ষে যুক্তি তেমন নেই। সুগার পরিপূর্ণ খাদ্য হয়ত ‍হৃদরোগ বা বহুমুত্রের কারণ নয়, তবে এটি মেদস্থুলতা ও অন্যান্য অসুবিধা ঘটাতে পারে এবং অবশ্যই এটা দাতের কেরিজ ঘটাতে সহায়তা করে। চিনি কম খাওয়া ভাল অন্তত এখন যা খাচ্ছি আমরা তার চেয়ে কম। চিনি বেশি খাওয়ার পক্ষে যুক্তি নেই। তবে পরিমিত খান এমন কথা বলতেই পারি আমরা। এ ছাড়া বেশি চিনি খেলে দেহ মোটা হতে পারে, সারাদিন চকলেট, লেবেঞ্চুস এবং কেন্ডি চুষলে দাতে কেরিজ হতে পারে এমন সত্য কথা উচ্চারণ করা যর্থাথ। সুতারাং চিনি খান আপত্তি নেই তবে বুঝেসুঝে খান।

 

বিশেষ প্রয়োজনেঃ 

আপনার যে কোন সময় এম্বুলেন্স সার্ভিস দরকার হতে পারে। যে কোন ধরনের এম্বুলেন্স সার্ভিস পেতে হলে খালেদ এম্বুলেন্স সার্ভিস এ যোগাযোগ করুন। অথবা কল করুন এখনই ০১৯৩৩২৪৬৫৭৭ – এই নাম্বারটি মনে রাখুন অথবা আপনার মোবাইল এ সেভ করুন এখনই। ইমেইলঃ kmosarrof@gmail.com

আমাদের এম্বুলেন্স সার্ভিস ভিজিট করুনঃ https://khaledrentacar.com/ambulance-service/