ঢাকা শহরের যানজট

প্রসঙ্গঃ ঢাকা শহরের যানজট

মোঃ আমিনুল হক

ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা হয়েও এখন মনে হচ্ছে দেশে সুন্দরভাবে বাঁচার অন্য কোথাও সুযোগ থাকলে আজই আমি ঢাকা ত্যাগ করি। এই অভিপ্রায় বোধকরি ৮০ লাখ নগরবাসীর অনেকেরেই। এখানে অনেক দৈনন্দিন সমস্যা। বছর বছর তা পুঞ্জিভূত হয়ে জটিল থেকে জটিলতরই হচ্ছে। আর যে সমস্যাটি নিয়ে সাম্প্রতিককালে বহুল আলোচিত হয়েছে তা দূর্বিষহ যানজট সমস্যা। আজ রাজধানীর অতীব গুরুত্বপূর্ণ সড়কে মুখোমুখি বাস, ট্রাক, রিকশা, বেবীট্রাক্সি, প্যাচে প্যাচে ঠেলাগাড়ী ইত্যাদি যানবাহন ও পথ পথচারীদের সবকিছুর দুর্ভেদ্য জটাজালে রাজপথ আড়ষ্ট হয়ে থাকার দৃশ্য নিত্যদিনের ঘটনা। রাঙার নিয়ম শৃংঙখলার কোন বালাই নেই। কেউ কাউকে রাস্তা ছাড়তে নারাজ। পিছু হাটারও উপায়ও নেই। সেই সাথে উপকৃত আর্বজনা গাড়ী টেম্পুর চোখ ঝাঝানো কাল ধোঁয়ার দূভোর্গ আর শব্দের দুষণ আজ নগরবাসীর প্রাত্যাহিক জীবনযাত্রার অংশ হয়ে দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়ে পরিণাম জেনেও নিজ সন্তানকেও সেই বিষাক্ত ধোয়া সেবন করিয়ে নিচ্ছি নিয়মিত। রাজপথের এই সমস্যার সংবাদ ও চিত্র এদেশের পত্র পত্রিকায় এত বেশি আর এত ঘন ঘন প্রকাশিত হয় যে সেগুলো এখন আর কারো মনে কোন দাগ কাটে বলে মনে হয় না যদি তা হতো তাহলে সড়কগুলোতে যানবাহন ও পথচারী চলাচল ও তা নিয়ন্ত্রণের যে সৃষ্টিছাড়া কুতি পদ্ধতি এদেশে দাড়িয়ে গিয়েছে তাতে পরিবর্তন আনার প্রয়াস অন্ততঃ চোখে পড়ত। বড়েই দুঃখের বিষয় স্বাধীনতা পরবর্তী আড়াই দশকে দেশে সরকারের পর সরকার এসেছে। কিন্তু এই অতী গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির কোন সুরাহা না হয়ে কেবল উপেক্ষিতই রয়ে গেল। ফলে দীর্ঘদিন সমস্যায় জর্জরিত নগরবাসী সেই সমস্যায় জড়িয়ে রইল। এখন আশংকা করা হচ্ছে এই সমস্যায় ভয়াবহতা অচিরেই নগরজীবনকে গ্রাস করে ফেলবে আর সদ্য ব্যস্ত নগরীর কর্মচঞ্চলতা পরিণত হবে স্থবিরতায়। বিষয়টি নিয়ে বছর বছর এবং বিশেষ করে অতি সম্প্রতি এত লেখালেখির পর আবারো কেউ লিখলে কোন ফলোদয় হবে বলে মনে করার কোন কারণ নেই। তবু কিছু কথার অবতারণা না করে পারলাম না।

আজ আমরা ক্রমবর্ধমান যানজটের এই সমস্যার মুখে যেন অসহায় হয়ে এই মহা দুর্যগের অপেক্ষায় আছি ও প্রতিদিন যানজটের বিস্তার ঘটেছে। এক রাস্তা থেকে আরেক রাস্তায়, মোড় থেকে মোড়ে, এক গলি থেকে আরেক গলিতে। ফলে নিত্যদিন এক অবর্ণনীয় দূর্ভোগ নগরবাসীর। বস্তুতঃ যানজটের কারণে এখন যন্ত্রচালিত ও মানুষচালিত যানবাহনের গতির মধ্যে পার্থক্য প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে।

যানজট

যানজট

কেন এই যানজট

এই যে সমস্যা আজ এতটা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে তার প্রত্যক্ষ কারণ বহুবার লেখালেখি হয়েছে এবং সকলেই তা জানি। না লিখলে প্রতিবেদনটি অসম্পূর্ণ থাকবে বলেই আবারো শুধু উল্লেখ করাঃ

কঃ সড়ক ব্যবহারকারীদের মাঝে আইন শৃংঙ্খলা সর্ম্পকে অজ্ঞতা এবং তা না মানার প্রবণতা।

খঃ সড়ক ফুটপাত অবৈধ দখল / ব্যবহার

গঃ অনভিজ্ঞ যানচালকের এবং ব্যবহার অনুপোযোগী / ত্রুটিপূর্ণ ও অবৈধ যানবাহনের সংখ্যাধিক্য।

ঘঃ সড়কের পরিমাণের তুলনায় রিকশা বেবিট্যাক্সির সংখ্যাধিক্য

ঙঃ শ্লথ ও দ্রুতগতির যানবাহনের মিশ্রণ।

চঃ যত্র তত্র বিভিন্ন যানবাহন পার্কিং করার প্রবণতা।

ছঃ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কোন কোনটির অক্ষমতা এবং সবগুলোর মধ্যে সম্বন্বয় অভাব।

জঃ আইন শৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থার আইন প্রয়োগ ও রক্ষায় শৈথিল্য, যানবাহন নিয়ন্ত্রণে দুর্বল ব্যবস্থাপনা, অপারগতা ও ক্ষেত্র বিশেষে অক্ষমতা ও দুর্নিতি।

মোট কথা এহেন দুর্ভোগের পেছনে সরকারী সংস্থা, যানবাহনের মালিক, চালক, সড়ক ফুটপাত ব্যবহারকারী সকলেই কোন না কোনভাবেই কমবেশি দায়ী। কেননা অমাদের দেশে যানবাহন চলাচলের কেবল স্বাধীনতা আছে, নিষেধাজ্ঞা পালন করার নজির নেই। খেয়াল খুশিমতো ট্রাক বাস মিনিবাসের চালকরা ও গাড়ী হাকায়, রিকশা, বেবী ট্যাক্সি, ঠেলাগাড়ীর চালকেরাও গাড়ী চালাচ্ছে। কারো ওপর কারো নিয়ন্ত্রণ নেই। নিয়ন্ত্রণকারীদের ওপরও যে কারো নিয়ন্ত্রণ আছে তাও বোঝা যায় না। ভয়টা কিন্তু অন্যখানে। বংশ পরাম্পরায়  যে পরিবেশের মধ্যে মানুষ থাকে তাই শেষ পর্যণ্ত মানুষের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি হয়ে যা যেমন দরিদ্র ভারতীয়রা দারিদ্রোর মাঝে থাকতে থাকতে তাকে অনেকটা সংস্কৃতি হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছ্ । সে জন্যেই বলেছিলাম ঢাকাসহ সার দেশের সড়কে সড়কে এখন যে অরাজক অবস্থা শুরু হয়েছে যে শেষ পর্যন্ত সংস্কৃতির রূপ না নেয়। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় ঢাকা শহরের লোকেরা যেন ক্রনান্বয়ে এই ব্যাপারগুলোর বিরক্ত হয়ে উঠেছে এবং মেনেও নিয়েছে।  মনে হয় এই দুর্গতি যেন জনগনের লিখন বলেই মেনে নিয়েছে। এটা হবার কথা ছিল না। দখলকৃত তবু সমস্যাটা এতটা প্রকট হতো না যদি আমাদের মাঝে কিছুটা দায়িত্ববোধ থাকতে।

আধনিকি নগরজীবন মানুষকে যেমন সুযোগ সুবিধা দিয়েছে, জীবনকে করেছে দ্রুততর, আরাম আয়েশপূর্ণ, নানাদিক থেকে সমৃদ্ধ তেমনি সঙ্গে সঙ্গে যান্ত্রিক সভ্যতার অনিবার্য সমস্যা হিসেবেই কতকগুলো অসুবিধাও সৃষ্টি হয়েছে নাগরিক মানুষের জীবনে। এটাই স্বাভাবিক। ভালমন্দ মিলিয়েই জীবন এবং তাই এগুলোকে সে দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখতে হবে। কিন্তু আমাদের মাঝে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অসহিষ্ণু, অবৈধ মনোভাব কাজ করে। ট্রাফিক আইন মেনে চলার ব্যাপারে এরূপ অনীহা ও স্বেচ্ছাচারিতা প্রকট। সকলেই বিশেষ করে গণ পরিবহণসমূহের চালকগণ ট্রাফিক আইন মানতে  নারাজ। এই অভ্যাসের পরিবর্তন অবশ্য বাঞ্চনীয়। কার আগে কে যেতে পারি এই পাল্লায় না নেমে এবং নিয়মকানুন এভাবে অবজ্ঞা না করে কিছুটা ধের্য্য ও নিয়ম শৃংখলার পরিচয় দিলেও এই প্রাত্যহিক যানজটের দুর্বিষহ জ্বালা যন্ত্রণা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পেতাম। কিন্তু না। সকলেই নিজের স্বার্থে উর্ধ শ্বাসে ‍ছুটে চলেছি। ডানে বায়ে  বা কারো দিকে তাকানোর ফুসরত নেই। ‍কি ন্যায় কি অন্যায় বাধ্য হয়ে বিবেকের বাইরে যেন অন্যায়কে গ্রহণ করেও চলতে হবে।

সড়ক ও ফুটপাতের

মহানগরীরেোট ১৬৩ কিলোমিটার ফুটপাতের ৯০ শতাংশের বেশি সিটি কর্পোরেশনের দখলে নেই। হকার ও অন্যন্যা ব্যবসায়ীরা এই ফুটপাত দখর করে আছে। ফুটপাত দখলের পর ইতিমধ্যেই হকাররা রাজপথের দিকেও হাত বাড়িয়েছে ফলে যানচলাচলের রাস্তা ক্রমশঃ সংকুচিত হয়ে পড়েছে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ যানজট ১৯৯৪ সালের ফেব্রুয়ারীর দিকে মেয়র হকার উচ্ছেদের প্রসঙ্গে বলেছিলেন তার আন্তরিকতার স্বত্তেও স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের অসহযোগীতার কারণে তা করা যাচেছ না। অন্যদিকে হকাররা বলেছে, মেয়র বিকল্প জায়গা না দিয়ে তাদেরকে উচ্ছেদ করা হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তাই তারা ফুটপাত দখল করে রেখেছে। তাদের কয়েকজনের ভাষা এজন্যে প্রতিদিন ৪০ থেকে ১০০ টাকা টাকা দিতে হয় পুলিশকে।  আর পুলিশরা বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মতে হকার উচ্ছেদে দরকার সার্বক্ষনিক পুলিশ মোতায়ন কিন্তু সে জনবল পুলিশের নেই বিভিন্ন মহলের মতে হকাররা রাস্তা ফুটপাত দখল করে রাখবে এটাই কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত।

সেই পাকিস্তানী আমল থেকেই হকার উচেছদের অভিযান নগরবাসী বারে বারে প্রত্যক্ষ করেছে। হকারদের জন্য একাধিক মার্কেট বসিয়ে পরোক্ষভাবে ফুটপাত দখলকেই উৎসাহিত করা হয়েছে। হকাররা কিন্তু আজও রাজপথে ছাড়েনি দিনে দিনে তারা আরো সুসংগঠিত ও শক্তিশালী হয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ার নতুন নতুন সরকারী ভূমিতে মার্কেট গড়ার চাপ প্রয়োগ করে চলেছে। রাজপথ হাইজ্যাকের কাসুন্দিতে হকাররার যে একক নায় তারও নীরব সাক্ষী নগরবাসী।

অভিযোগ আছে যে, হকারদের সাথে এক শ্রেণীর রাজণৈতিক দল/ কর্তৃপক্ষের বিশেষ বিশেষ মহলের গোপন লেনদেনের জমজমাট কারবারই হকার উচেছদের বিপত্তির মূল উৎসা। সে জন্যেই হয়ত হকার উচ্ছেদের ব্যাপারে সংশি্‌লষ্ট ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মাঝে মাঝে দু একবার হম্বি তম্বি হুংকার উচ্চারিত হলেও পরবর্তীতে সবপূর্ববৎ। মনে হচ্ছে এই ‘ট্রাডিশন’ অব্যাহতই থাকবে।

আমরা যারা রাস্তাই বের হই তাদের মানসিকাও ভেবে দেখার মত। অনেকেই চাই ঘরের দরজায় রিকশা, রিকশা বসেই রাস্তায়, অফিসের প্রবেশ মুখে কেনাকাটা এবং ইচ্ছামত যেখানে খুশি সেখান থেকেই বাস টেম্পতে উঠানামা। এই অদ্ভুত অভ্যাসের কারণেই আজ দেশের রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ব্যস্ততম এলাকার প্রধান সড়কে অবৈধ কাচাবাজার শুধু গড়ে উঠেইনি উত্তোরোত্তর তার বিস্তৃতি ঘটেছে। যেমন বাংলাদেশ ব্যাংকসহ মতিঝিলের অন্যত্র বাজার বসা। যেখানে খাসীর মাংস, গরুর মাংস, বরবটি, মানকচু, কাচকিনি মাছ থেকে কিনা বিকিকিনি হয় জমজমাটের সাথে। েএই চিত্র গোটা মহানগরীর সর্বত্র। যেসব এরাকা একটা শহরের জন্য নান্দনিক দিক থেকে বর্হিবিশ্বে পরিচয় বহন করার কথা। এর ফলে শুধু চলাচলেই বিঘ্ন ঘটছে না বজ্য আর্বজনার পরিমাণ ও বিস্তৃতি উভয়ই ঘটছে। হরতালের দিন কিংবা রাতের বেলা রাস্তা যখন ফাকা হয়ে তখন তা বোঝা যায়। কিছুকাল আগেও কলকাতাকে ময়লা আবর্জনা ও হকারের শহর বলে ব্যঙ্গ করা হতো। বলা হতো পশ্চিম বঙ্গের বামফ্রন্ট সরকার ভোট ঠিক রাখার জন্য শহরে আর্বজনা পুষছেন। সেই কোলকাতা শহরই আজ হকারমুক্ত হয়ে ভিন্নরূপ ধারণ করেছে। বাংলাদেশে বামপন্থী সরকার ক্ষমতায় তারপরও রাস্তাঘাট হকার ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গেছে। পূর্ন হচ্ছে আবর্জণার স্তুপে। একে সময়ের পরিচ্ছন্নতায় রেকর্ডধারী ঢাকার সেই সুনাম আজ ক্ষুন্ন হয়ে গেছে।

       নগরবাসীর প্রত্যাশা এবং রাজনীতিবিদদের প্রতিশ্রুতি ও ফাঁকা বুলি

       ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে নগরবাসীর প্রত্যাশা ছিল অনেক। বর্তমান সরকার প্রতিষ্ঠায় পূর্বে ধারণা দেয়া হয়েছে পূর্বের সরকারের কাছ থেকে সহযোগীতার আশা ছিল । বর্তমানেও বিভিন্ন সংস্থার অসহযোগীতাসহ নানা প্রতিকূলতার কথা বলা হচ্ছে। এদিকে দীর্ঘ তিন বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেল। নগরবাসী কি পেল? দুই বৎসর পূর্বে মেয়র সড়ক বেদখলদারদের সড়ক ছেড়ে ফুটপাতে উঠার অনুরোধ জানিয়ে যেন ফুটপাত উঠার অনুরোধ জানিয়ে যেন ফুটপাত দখলকে বৈধ করে তুললেন। ফুটপাত সড়ক কোনটাই মুক্ত হলো না। মাস কয়েক আগে এবং অতি সম্প্রতি অবৈধ রিকশা সমলে উচ্ছেদ করার জোর কার্যক্রম নেয়া হলে। অজানা কারণে তা চাপা পড়ে গেল। নুতন করে আশ্বাস দেয়া হলো আগামী মার্চের মধ্যে নতুন ঢাকা উপহার দিবেন। স্থানীয় সরকার পল্লী ‍উন্নয়ন মন্ত্রী ঘোষণা দিলেন ঢাকাকে আর্ন্তজাতিক মানে উন্নীত করা হবে। আর্ন্তজাতিক মান সম্পর্কে তাদের কী ধারণা তা আমরা জানি না। তবে বিষয়গুলো মহানগরবাসীর কাছে যেন শুধু প্রহসনই মনে হচেছ।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের নিয়মিত সভা সমাবেশ হওয়ায় ইদানিং শেয়ার বাজারে ক্রেতা বিক্রেতাদের দ্বারা মতিঝিল বাণিজ্য এলাকা আক্রান্ত হওয়ায় ঢাকার প্রাণকেন্দ্র নিত্য যানজট লেগেই আছে। আগের দিনে ধর্মীয় সমাবেশ মজলিশ মহানগরীর পরিচিত দৃশ্য ছিল। কিন্তু তা হতো প্রধান প্রধান সড়ক পরিহার করে এবং সাধারণত রাত ১০ টার পর। এখন সে বালাই নেই। ব্যস্ত নগরীর চলমান স্রোত থামিয়ে দিতে এখন নে সবার মধ্যেই চলছে এক প্রতিযোগীতা।

       ধীরগতির যানবাহনঃ

       আজকের ঢাকা মহানগীরতে যানবাহনের সর্বসাকুল্যে সংখ্যা এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় ৫৫ লাখ। এর মধ্যে ৩০ লাখ হল ধীরগতির যান রিকশা (লাইসেন্সপ্রাপ্ত রিকশার সংখ্যা মাত্র ৮০ হাজার)। ধীর গতির এই যান অথচ মোট সড়কের প্রায় ৭৫ ভাগ দখল করেছে। রিকশায় এখন নিয়ম শৃঙ্খলার কোন বালাই নেই, বৈধ অবৈধ বলে কিছু নেই। বছর তিনেক আগেও কোলকাতা ছিল ট্রাফিক ও জনস্বাস্থ্যের বিচারে দুঃ স্বপ্নের নগরী। আর্বজনা স্তুপের ভিতর চলে গিয়েছিল কলকাতা। কিন্তু আজ আর্বজনামুক্ত হতে না পারলেও যানজটের দুর্ভোগ দুর্দশা থেকে কোলকাতাবাসী অনেকাংশে মুক্ত হতে পেরেছে ঠিকই। প্রধান কারণ পাতাল রেল হলেও প্রধান প্রধান সড়ক থেকে রিকশা তুলে দেয়া হয়েছে। তৃতীয় কারণ, ট্রাফিক আইনের ও ব্যবস্থার সুষ্ঠু প্রয়োগ। সুতারাং ঢাকা শহরের ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে রিকশার সংখ্যা হ্রাস এবং পর্যায়ক্রমে তা একেবারে তুলে দেবার কা অব্যশই ভাবতে হবে। সাথে সাথে মেক্সি যানবাহন ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।ু

কোলকাতা পশ্চিমবঙ্গের মাকসবাদি সরকারের প্রধান কর্মস্থল হয়েও সেখানে রিকশা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ আামাদের দেশে লাখ লাখ নগরবাসীর সাথে রিকশা উঠিয়ে দেবার কথা উঠলেই এক শ্রেণীর তথাকথিত বামপন্থীগণ সোচ্চার প্রতিবাদ করে বসেন। কারো কারো মতে ইউনিয়নবাজীর মাধ্যমে গরীব রিকশা কর্মীকে শোষণ করে প্রচুর কামাই বন্ধ হয়ে যাবার ভয়েই এই প্রতিবাদ। এছাড়া নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত এক শ্রেণীর লোকেরা ভাবেন তাদের চলাফেরার কি হবে। কেউ কেউ রিকশাকে আরামদায়ক ও সস্তা ভাবতে পারেন মহানগরীর রাস্তায় ভিড়ে তা কিভাবে আমার বোধগম্য নয়। উপমহাদেশের অন্যান্য নগরীতে রিকশা নেই। সেখানে নানান যানবাহনে চলাফেরা এদেশের মতো ব্যয়সাধ্য নয়। আসলে রিকশা গরীবের বাহন নয় বরং গরীব রিকশাকর্মীর অকাল শরীরপাত ও মানবেতর জীবন যাপনের কারণ হচ্ছে এই রিকশা।

অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে প্রভাব

       ঢাকাকে কেন্দ্র করে দেশের সকল উন্নয়ন ও অর্থনৈতকি কর্মকান্ড আবর্তিত ঢাকার সুস্বাস্থ্যের ওপর দেশের সুষ্ঠুতা অনেকাংশে নির্ভরশীল। কিন্তু এখানে নিত্যকার দীর্ঘকালীন যানজটের কারণে লাখ লাখ নগরবাসীদের যে মূল্যবান কর্মঘন্টা অপচয় হয় আর্থিক মানদন্ডে বছরে সেই ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৬০ কোটি টাকা। পাশাপাশি কর্মস্থলের সঠিক সময়, ট্রেন, বিমান, লঞ্জ, দূরপাল্লার কোচ ইত্যাদি মিস করা পণ্যসামগ্রীকে পরিবহণ প্রতিবন্ধকতাজনিত কারণে মূল্য স্ফীতি, রুগ্ন ব্যাক্তিকে ডাক্তার হাসপাতালে পরিবহনজনিত বাধা ইত্যাদি যে মানুষের অবর্ণনীয় কষ্টের কারণ হয়ে ‍উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করেছে ( ক্ষেত্র বিশেষে প্রাণ হরণও) তা হিসাব আকাশচুম্বী অংকে দাড়াবে বললে অত্যুক্তি হবে না। দেশের অর্থনীতিতে ক্ষতিকারক নিত্যদিনের এই বিপত্তি ক্ষতিকারক নিত্যদিনের এই বিপত্তি দূর করার জন্য বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার দেশের শিল্প বাণিজ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জোর আবেদন জানিয়ে দাবিনামা উচ্চারিত হয়। রাজধানীতে অবাঞ্চিত যানজটের জন্য কর্তৃপক্ষের উদাসিনতাকে দায়ী করে উল্লেখ করা হয়ে যে, সড়ক ফুটপাতের ওপর সৃষ্ট অরাজকতা ও অনাচার শুধু নাগরিক জীবনে অশেষ দুগর্তির কারণই নয় এর পরিণতিতে শিল্প বাণিজ্যের স্বাভাবিক কর্মকান্ড বিপর্যস্ত হচ্ছে। কেননা আইন শৃংঙ্খলার ব্যতায় ও আইনানুগ কর্মপ্রবাহে বাধা সৃষ্ট অর্থনৈতিক কার্যক্রমেই রুদ্ধ করে দেয়। তাই আইন শৃংঙ্খলাকে রক্ষা করতে পারলে উচ্ছৃংখলাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে রাজধানী কেন্দ্রিক দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নই ত্বরান্বিত হবে তথা উন্নয়ন কর্মকান্ড গতিশীলতা লাভ করবে।

হকারদের দ্বারা সড়ক ফুটপাতের মত রাজধানীর বাসটার্মিনালের প্রসঙ্গে একই কথা চলে। শহরের কেন্দ্রস্থলের ফুলবাড়িয়া বাস স্ট্যান্ড থেকে শুরু করে প্রায় সব স্ট্যান্ডই অবৈধ। পরিবহন ব্যবসার সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা বলেছেন, রাস্তার পাশের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডের জন্য আলা জায়গা সরকার দিচ্ছ না বলে এভাবে রাস্তার একাংশ নিয়ে  বাসস্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। হকারদের দোকান পসরা ও বাসট্রাকের স্ট্যান্ডের পর ব্যস্ত সড়কগুলোর ২০ শতাংশের বেশি যান চলাচলের কাজে ব্যবহৃত হতে পারে না। এদিকে সিটি কর্পোরেশেনের আওতাভুক্ত ২২ টি সুপার মার্কেটসহ ৯০ টি মার্কেটের মধ্যে অধিকাংশ মার্কেটের নিজস্ব পার্কিং এলাকা নেই। ফলে এসব রাস্তার অর্ধেক গাড়ী আমাদের দখলে চলে যাওয়ায় অবশিষ্ট রাস্তায় বহমান গাড়ী রিকশার মধ্যে যট সৃষ্টি প্রায় প্রতিদিনের অনিবার্য ঘটনা। একই কথা চলে সিটি কর্পোরেশনের ২৬ টি সহ মহানগরীর শতাধিক কমিউনিটি সেন্টারের বেলায়। বস্তুতঃ এসব কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন রাস্তাসমূহের অর্ধেকই অব্যবহৃত হয়ে পড়ে। এমনিতেই বাস টেম্পু চালকদের মাঝে যেখানে ইচ্ছা সেখানে বাস টেম্পু দাড় করিয়ে যাত্রী উঠা নামার প্রবণতা প্রকট। আসলে ট্রাফিক আইন অমান্য করার এবং কোন আইন কানুনের তোয়াক্কা না করার প্রবণতা ট্রাক ও গণপরিবহন যানের চালকদের মধ্যেই বেশি পরিলক্ষিত হয়। অবশ্য এর বিপরীতে আছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চক্ষু মুদে থাকার ট্রাডিশন।

       ওভার ব্রীজ

ওভার ব্রীজের সঙ্গে পথচারীদের পরিচয় দীর্ঘদিনের হলেও তা মধুর নয়। এমনিতেই ভিখারী ও ফেরিওয়ালাদের দ্বারা এগুলো থাকে জবর দখলে। এর ওপর তা যদি হয় অপরিকল্পিত। অতি সম্প্রতি নির্মিত ওভার ব্রীজগুলো যানচালকদের জন্যে কিছুটা স্বস্তি বয়ে আনলেও পথচারীদের জন্যে তা শাস্তিস্বরূপ নিছক বাধ্য হয়েই এগুলো মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ক্লান্তিভরে নগরবাসী কপাল কুচকিয়ে ব্যবহার করে চলেছে।

অচল নিষেধাজ্ঞা

ইতিপূর্বে মতিঝিল এলাকায় অফিস চলাকালীন সময়ে কোন রিকশা বা ঠেলাগাড়ী চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। এরশাদ আমলেও নগরীর অভ্যন্তরে দিনের বেলায় ট্রাক চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু বর্তমানে এসব নিয়ম কানুন ঢাকা নগরীর বুক থেকৈ মনে হয় উঠে গেছে অথবা এই নিষেধাজ্ঞা কার্যত অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে আছে। ফলে যত্রতত্র রিকশা ট্রাক ঠেলাগাড়ী যখন তখন সরু গলিতেও যেমন তেমনি ঢুকছে বড় রাস্তাতেও।

নিয়ম শৃংঙ্খলার প্রতি উদাসীন্য

নিত্যদিনের এই নৈরাজ্য ও দূর্বিপাকে অতিষ্ঠ নগরাবাসীকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। কিন্তু উদ্ভুত এই সমস্যার নিরসনে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সমন্বিত উন্নয়ন ছাড়া ঢাকাবাসীর নিষ্কৃতি সম্ভব নয়। এর জণ্যে সরকার ও পুলিশ বাহিনীর আন্তরিক ও সক্রিয় পদক্ষেপ যেমন দরকার তেমনি জনসাধারনের সহযোগীতা ও সমানভাবে প্রয়োজন কেননা, সবচাইতে যে বিষয়টি গুরুত্বর্পূণ তা হলো নিয়ম শৃংঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করা। নগরীতে ট্রাফিক সংক্রান্ত যেসব নিয়ম কানুন, বিধি নিষেধ ‍চালু আছে তা ‍প্রায় সর্বত্রই প্রতিনিয়ত উপেক্ষিত হচ্ছে িএর সামান্যতমও মানার কোন বালাই নেই বা কারো কোন মাথা ব্যথা নেই। নিয়ম মানার যে প্রয়াজন আছে বা নিয়ম আসলে অন্য সকলের সাথে নিজের চলাও যে সহজ হয়ে যেতে পারে এই বোধটিই যেন কারো নেই। যে কারণে অহরহই দেখা যায় বেপরোয়া গাড়ী চালনা, অনাবশ্যক হর্ন বাজানো, বিপজ্জনক ওভার টেকিং, হলুদ লাইন  অতিক্রম এবং জেব্রা ক্রসিং এর ওদর (যদিও তা তেমন নাই বললেই চলে) গাড়ী দাড় করানোর প্রতিযোগীতা।

শৃংঙ্খলা প্রসঙ্গে একটি কথা না লিখে পারলাম না। যে দেশে ক্ষমতায় যাবার এবং ক্ষমতায় থাকার লোভে দেশের মঙ্গল চিন্তায় নিয়োজিত ! বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সময় শৃংঙ্খলা জ্ঞানের যে পরিচয় দিয়েছে এবং বর্তমানে খোদ জাতীয় সংসদের জনপ্রতিনিধিরা যে দৃশ্য প্রদর্শন করেছেন তাতে রাস্তাঘাটে জনসাধারণের দ্বারা সুশৃংঙ্খল আশা করি কোন আক্কেলে। নিয়ম বিধিকে তোয়াক্কা না করার এই প্রবণতা আজ আমাদের জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে শিকড় ছাড়িয়েছে। বস্তুতঃ সমগ্র দেশে সমগ্র সমাজে আইনকে অবজ্ঞা করার যে প্রবণতা দানা বেধেছে তাই নিত্য প্রতিফলিত হচেছ সড়ক মহাসড়কগুলোর বিশৃংঙ্খলা অবস্থার মধ্যে। যে দেশে রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক কর্মকান্ডের সকল ক্ষেত্রে আইনের প্রতি অবজ্ঞার ভাব বিরাজ করছে সে দেশের মানুষ কেবল পথ চলার সময় আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে এমন মনে করার কোন কারন নেই। আইন সর্ম্পকে যেমন সচেতনাতা প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন আইনকে শ্রদ্ধা করার, আইনকে সবকিছুর উর্ধে স্থান দেওয়ার চেতনার উন্মেষ।

       ভয়াবহ ভবিষ্যৎ রোধে করণীয়

লোক সংখ্যার দিকে থেকে  ঢাকা শহর পৃথিবীর মেগানগরীর সঙ্গে তুলনীয় এবং যে হারে এর লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে পরবর্তী শতাব্দীর প্রারম্ভেই ঢাকা পৃথিবীর ৬/৭ টি মেগানগরীর একটাতে রূপান্তরিত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। আর বর্তমান এই  সমস্যার বিস্তৃতি ত্বরিতগতিতে রুখতে না পারলে শুধু নগরীর যান ও জন চলাচল তথা সমগ্র পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙ্গে এবং কর্মচঞ্চলতা স্থবির হয়ে রাজধানীর প্রাণ প্রবাহ সম্পূর্ণ অচল হয়েই পড়বে না গোটা দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হয়ে এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করবে। কাজেই ঢাকার স্বাভাবিকজ জীবনযাত্রা ও কর্মতৎপরতা অব্যাহত ও সচল রাখার জন্য এই দুঃষহ অবস্থা থেকে নগরবাসীকে উদ্ধারে বিলম্বের কোন অবকাশ নেই। কেননা যে আশংকা আজ স্পষ্টভাবেই দেখা দিয়েছে তার পূর্বেই আমাদের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই অসহনীয় ও নরকীয় যন্ত্রনার নিরসন ও সুরাহাকল্পে দীর্ঘমেয়াদী বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণের সাথে সর্বাগ্রে প্রয়োজন রাস্তায় চলাচলে শৃংঙ্খলা প্রতিস্ঠা করা। যানের ফিটনেস সার্টিফিকেট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাদান ও নবায়নে যুগোপোযোগী  নীতিমালা প্রণয়ন ছাড়াও বাস্তব আইনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা ছাড়া এই লক্ষ্য অর্জিত সম্ভব নায়। স্বল্পমেয়াদী ব্যবস্থাগুলার মাঝে  ‘ওয়ানওয়ে’ পদ্ধতি ঢাকার জন্য একটা কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে প্রমাণিত হবে না। একটি রাস্তা থেকে যানবাহনের চাপ সাময়িকভাবে কমে আসলেও িএর ফলে অন্য বিকল্প রাস্তাগুলোর ওপর চাপ যে অতিরিক্ত মাত্রায় বাড়বে তা অনুধাবন করা দরকার। তার পরিবর্তে কিছু কিছু প্রধান রাস্তায় ঠেলাগাড়ী ও রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। সেই সাথে যত্রতত্র বাস টেম্পুর স্টপেজের ব্যবস্থা না রাখার প্রতি নজর দিতে হবে। ব্যস্ত এলাকায় পার্কিং এর ব্যবস্থা করতে হবে। বড় রাস্তাগুলোর পাশের প্রস্তাবিত সকল ইমারতসমূহের নিচতলা পার্কিং এর জন্য অবশ্যই খালি রাখতে হবে এবং পুরাতন ভবনগুলোর নিচতলাতে বাধ্যতা মুলকভাব সংস্কারের মাধ্যমে খালি করে পার্কিং এর ব্যবস্থা করার বিষয়ও বিবেচনা করা যেতে পারে। ময়লা আর্বজনা সঠিকস্থানে নিয়মিতভাবে ফেলা ও অপসারণ করা, ড্রেন ও গ্যাটারকে চলমান রেখে বৃষ্টিজনিত জলবদ্ধতা সৃষ্টি বন্ধকরণ ইত্যাদি কর্মকান্ড মহানগরীরর যানবাহন সংক্রান্ত জটলাকে অনেকাংশে লাঘবে সাহায্য করবে।

প্রতিরাতে যখন রাস্তা ফুটপাত ফাকা থাকে তখন পুলিশ বাহিনীর সহায়তায় পর্যায়ক্রমে শহরের বাহিনীর সহায়তার পযায়ক্রমে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো থেকে অবৈধ মাচান, ছাউনিসহ জমে থাকা আর্বজনা পরিষ্কার করা হলে অতি স্বল্প সময়ে তার সুফল পাওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই সামান্য কাজটি কেন করতে পারছে না তা বোধগম্য নয়। পক্ষান্তরে আইল্যান্ডের মাঝে দীর্ঘ গ্রীল দেয়ার মত ব্যয়সাধ্য কাজটি ‘প্রায়রিটি’ ভিত্তিতে পড়ে কিনা ভেবে দেখার মত।  একই বিবেচনায় প্রায় বছর খানেক ধরে কারওয়ান বাজার আন্ডার গ্রাউন্ড বাইপাস নির্মাণের জন্য লাখ লাখ নগরবাসীরকে এমন ভোগান্তি দেয়ার অবশ্যকতাও যুক্তিযুক্ত নয়।

দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে মিনিবাসের উপর নির্ভর না করে অধিক যাত্রী বহনযোগ্য গণপরিবহন ব্যবস্থার কথা চিন্তা করা প্রয়োজন। নগরীর চারপাশে প্রায় নির্মিত বন্যনিরোধ বাধ প্রকল্প অচিরেই শেষ করে তার ওপর দেয় দূর পাল্লার ভারী যানবাহন।