রক্তশূন্যতার কারণ ও চিকিৎসা
ডাঃ এস কে অপু
কোন কোন রোগের উপসর্গ এনিমিয়াকে আমরা বলি ‘রক্তশূণ্যতা’ বা রক্তস্বল্পতা। রক্তশূণ্যতা বাড়াতে থাকলে রোগী মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে। এমনকি মৃত্যু পর্যণ্ত ঘটে।
আমাদের দেশে গর্ভবতী মায়েদের মৃত্যুর একটি বড় কারণ হচ্ছে ‘রক্তশূণ্যতা’। শুধু গর্ভবতী মায়েরাই নয় আমাদের দেশে বেশির ভাগ মানুষ কম বেশি রক্তশূণ্যতায় ভোগে।
রক্তশূণ্যতা কী ঃ কিন্তু রক্তশূন্যতা কাকে বলে ? এর পূর্বে রক্তের গঠন জানা প্রয়োজন। রক্ত গঠিত হয় জলীয় পর্দাথ এবং রক্তকণিকা দ্বারা। তিন ধরনের রক্তকণিকা আছে। লোহিত বা লাল (RBC), শ্বেত (WBC) এবং অনুচক্রিকা লোহিত রক্ত কনিকাতে এক ধরনের লাল পর্দাথ থাকে যার কারণে রক্ত লাল দেখায়। এর নাম হিমোগ্লোবিন। ১০০ মিঃ লিটার রক্তে বয়স ও লিঙ্গ অনুযায়ী হিমোগ্লোবিনের একটি স্বাভাবিক মাত্রা থাকে।
সুতারাং রক্তে এই প্রয়োজনীয় পরিমাণ হিমোগ্লোবিনের চেয়ে কম পরিমাণ হিমোগ্লোবিন থাকার অবস্থাকেই বলে এনিমিয়া বা রক্তশূণ্যতা।
হিমোগ্লোবিনেররক্তশূন্যতার কারণ ও চিকিৎসা
একজন প্রায়বয়স্ক পুরুষদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা ১৩ -১৮ গ্রাম প্রতি ১০০ মিলিতে। এবং প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলার রক্তে ১১.৫ – ১৬.৫ গ্রাম/ ১০০ মিলি। এ মাত্রার কম হলেই মানুষ রক্তশূণ্যতায় ভোগে।
রক্তশূণ্যতার কারণ
রক্তশূণ্যতার অনেক কারণ আছে। এর মধ্যে প্রধান কারণ হচ্ছে তিনটি
১। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ
এ ধরনের রক্তক্ষরণ হতে পারে কম সময়ে বেশি পরিমাণ (Acute) এবং দীর্ঘস্থায়ী ( Chronic) কোন আঘাতজনিত কারণ, বক্রকৃমি ও পাকস্থলিতে ঘা এর কারণে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে রক্তশূণ্য্তা দেখা দেয়।
২। অতিরিক্ত পরিমাণে লোহিত রক্ত কণিকার ভাঙ্গন বচা হিমোলাইসিস লোহিত কণিকা ভাঙ্গার অনেক কারণ আছে। যেমন-
ক) জন্মগত রোগ- থ্যালাসোমিয়া
খ) অর্জিত রোগ- ভিটামিন বি ১২
গ) কোন কোন এন্টিবডির কারণে
ঘ) শারীরিক আঘাতে প্রসথেটিক হার্ট ভালব।
ঙ) রাসায়নিক কারণ যেমন ওষুধ
চ) ম্যালেরিয়া
ছ) কোন প্রদাহে টক্সিন উৎপাদন হলে।
এ কারণগুলোতে অতিরিক্ত হারে লোহিত কণিকার ভাঙ্গন ঘটায় রক্তশূণ্যতা দেখা দেয়।
৩। লোহিত কণিকা তৈরিতে স্বল্পতা প্রধানতঃ লোহিত কণিকা তৈরি হয় অস্থিমজ্জা থেকে। সুতারাং অস্থিমজ্জায় এই কণিকা তৈরিতে বাধাগ্রস্থ হলেই স্বল্পতা দেখা দেয়। কারণগুলো হচ্ছেঃ
ক) অস্থিমজ্জার স্বল্পতা
খ) লোহা, ভিটামিন বি ১২ এবং ফলিক এসিডের অভাব
গ) অন্তক্ষরা গ্রহ্নির নিঃসরণের স্বল্পতাজনিত রোগ। যেমন হাইপোথাইরয়েডিজম, হাইপোটিটুইটারিজম এবং হাইপোগোনাডিজম।
ঘ) লিউকোমিয়া, ফাইরোসিস, সেকেন্ডারী কারসিনেমা।
ঙ) সিডারোব্লাস্টিক এনিমিয়া
চ) দীর্ঘস্থায়ী জীবাণু সংক্রমণ।
ছ) বিভিন্ন প্রকার ওষুধ সেবন এ প্লাষ্টিক এনিমিয়া।
জ) কীটনাশক ব্যবহার।
ঝ) তেজস্ক্রিয় রশ্মির প্রভাব। এসব কারণে অস্থিমজ্জায় লোহিত কণিকা তৈরিতে স্বল্পতা দেখা দেয়।
রক্তশূণ্যতার উপসর্গ
রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ সামাণ্য কমে যে রক্তশূণ্যতা হয় তাতে উপসর্গ ধরা যায় না। কিন্তু রক্তশূণ্যতা মারাত্মক হলেই রোগীর নান উপসর্গ দেখা দেয়। রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে। কোন কাজে ক্লান্তি আসে। অবসাদ লাগে। বুক ধড়ফড় করে বেশি পরিশ্রমে শ্বাসকষ্ট হয়। হাত পায়ের আংগুল ঝিনঝিন করে অবশ মনে হয়। ঘুম হয় না মাথাব্যথা হয়। চোখে ঝাপসা লাগে কখনো কখনো হাত পা, সমস্ত শরীর ফ্যাকাশে মনে হয়।
এছাড়া শুধু লোহার অভাবজনিত কারণে রক্তশুণ্যতা হলে অস্বাভাবিক খাদ্যের প্রতি আসক্তি হয়। মুখের কোণায় ঘা হয়। জিহ্বায় ঘা ও প্রদাহের কারণে খাদ্য গিলতে অসুবিধা হয়। নখ ভেঙ্গে আর ও চামচের আকৃতি হয়।
যারা জন্মগত রক্তশূণ্যতা ‘থ্যালসেমিয়ার’ ভোগে তাদের প্লীহা বেড়ে যায় রোগীকে মঙ্গোলীয় জাতির মতো দেখায়।
পরীক্ষা নিরীক্ষা
রক্তশূণ্যতার লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়া মাত্রই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। কোন কারণ বের না করে ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। রক্তশুণ্যতার জন্য কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা প্রয়োজন। যেমনঃ
১। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা দেখা।
২। পেরিফেরাল ব্লাড ফিল্ম পরীক্ষা।
৩। রক্তের বায়ো কেমিক্যাল সিয়াম আয়রণ লোবেল পরীক্ষা।
৪। অস্থিমজ্জা পরীক্ষা।
৫। মাথার এক্সরে
৬। হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রাফোরেসিস।
এছাড়া পরিপাকনালীর রক্তক্ষরণে এন্ডোস্কপি পাকস্থলীর মিউকোসার বায়োপসি, পাকস্থলীর রসের এনালাইসিস করা যায়। মল পরীক্ষা করা হয় কৃমির জন্য।
চিকিৎসা
রক্তশূণ্যতার চিকিৎসা করা একরকম কঠিনই বলা যেতে পারে। এ চিকিৎসার তিনটি পদ্ধতি আছে। যেমনঃ
১। রোগী রক্তশূণ্যতার কারণে যেসকল লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দেয় সেসব লক্ষণ ও উপসর্গের জরুরী চিকিৎসা করা।
আঘাতজনিত কারণে রক্তক্ষরণ হয়ে রোগী ফ্যাকাশে হয়ে গেলে জরুরী ভিত্তিতে তাকে সাময়িক উন্নতির জন্য রোগীর দেহে রক্ত পরিসঞ্চালন করতে হয় এবং জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালে নিতে হয়।
২। রক্তশূণ্যতা যদি কোন অসুস্থতা বা শারিরিক ত্রুটির জন্য হয় তবে সেই রোগের চিকিৎসা করাতে হবে। যেমন থ্যালসেমিয়া বা এ প্লাষ্টিক এনিমিয়া হলে রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন। তারপর প্রয়োজন অস্থিমজ্জার পরিবর্তন অর্থ্যাৎ বোনমেরো ট্রান্সপ্লানটেশন। কোন রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারে বা ওষুধ সেবনে কিংবা এক্সরের কারণে রক্তশূণ্যতা দেখা দিলে জরুরী তা পরিহার করা প্রয়োজন।
৩। রক্তশূণ্যতা যদি কোন খাধ্য উপাদানের ঘাটতিতে হয় তবে সেসব খাদ্য উপাদান পূরণ করতে হবে। ভিটামিন বি ১২, ফলিক এসিড বা লোহার অভাবে রক্তশূণ্যতায় তাড়াতাড়ি এসব উপাদান দেহে পূরণ করতে হবে। রক্তশূণ্যতা দূর হবে।
প্রতিরোধ ঃ বাংলাদেশের মানুষের বিশেষ করে মহিলাদের রক্তশূণ্যতা প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজন বেশি করে শাকসবজি খাওয়া। এছাড়া, দুধ, ডিম, কলিজা, মাংস ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে লৌহ উপাদান থাকায় রক্তশূণ্যতা দূর করে।
গর্ভবতী মায়েদের রক্তশূণ্যতা প্রতিরোধ শাকসবজি খাওয়ার সাথে সাথে চিকিৎকের পরামর্শে আয়রণ বড়ি ও ফলিক এসিড প্রয়োজন।
বিশেষ প্রয়োজনেঃ
আপনার যে কন সময় এম্বুলেন্স সার্ভিস দরকার হতে পারে। যে কোন ধরনের এম্বুলেন্স সার্ভিস পেতে হলে খালেদ এম্বুলেন্স সার্ভিস এ যোগাযোগ করুন। অথবা কল করুন এখনই ০১৯৩৩২৪৬৫৭৭ – এই নাম্বারটি মনে রাখুন অথবা আপনার মোবাইল এ সেভ করুন এখনই। kmosarrof@gmail.com
আমাদের এম্বুলেন্স সার্ভিস ভিজিট করুনঃ https://khaledrentacar.com/ambulance-service/