সীতাকুন্ড ঘুরে

  • by

সীতাকুন্ড ঘুরে

আমাদের বাস সীতাকুন্ড বাজারে এসে থামলো। ঘড়িতে তখন বেলা এগরোটা দশ। চট্রগ্রাম থেকে এখানে পৌঁছাতে সময় খরচা হলে প্রায় দ ঘন্টা। রাস্তার উল্টোদিকেই ভাঙাচোরা নামবিহীন এক হোটেল। এখানে আসার আগেই জানা গিয়েছিল এই হোটেলের কলিজা ভূনা আর পরোটার খ্যাতি নাকি ভুবনজোড়া। তাই এক দৌড়ে রাস্তা পার হয়ে সোজা হোটেলে। খেতে খেতেই চললো প্ল্যান। আমরা যাবো চন্দ্রনাথ পাহাড়ে। উঠতে হবে একেবারে চূড়োয়। কাধেঁ আছে হ্যাভারস্যাক। ওটাতে ছুরি, কাঁচি থেকে শুরু করে বাইনোকুলার, ফার্স্ট এইড বক্স সবই আছে। দুই বোতল মিনারেল ওয়াটারও কেনা হলো। বাজারের মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি রিকশা। রিকশাওয়ালারা গলা ফাটিয়ে চেচাচ্ছে ঢাল, ঢাল, পাহাড়ের ঢাল। দরদাম করে ১০ টাকায় রফা হলো। শুরু হরো পথ চলা। মাটির রাস্তা, চারপাশে ঘন সবুজ পাহাড়। পাহাড় দিয়ে ঘেরা ছোট্র শহর সীতাকুন্ড। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থ স্থান বলা যায়। হিন্দু পুরাণের বহু ঘটনার স্বাক্ষী এই সীতাকুন্ড। চন্দ্রনাথ পাহাড় সীতাকুন্ডের সবচেয়ে উচু পাহাড়। এই পাহাড়ের চুড়ায় রয়েছে চন্দ্রনাথ মন্দির। হিন্দুধর্ম ভক্তরা ব্শ্বিাস করন অত্যান্ত পবিত্র এই মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনা করলে মনষ্কমনা পূর্ণ হয়। যাই হোক, রিকশায় যেতে যেতে হঠাৎ পড়লো অসম্ভব সুন্দর আর বিরাট পুকুর। স্বচ্চ পানিতে কানায় কানায় পূর্ণ দিঘিটি। জানা গেলো, সীতা দেবী এই দিঘিতেই স্লান করতেন। এরপর কিছুদূর এগোতেই চোখে পড়লো একটি বটগাছ। বিশালি এই বটবৃক্ষের চারপাশে লোহা তার দিয়ে ঘেরা। এই বটগাছের ছায়াতেই স্বামী বিবেকানন্দ কিছু সময় কাটিয়েছিলেন। বটগাছটি পার হতেই এক আশ্রম। বিশাল এই আশ্রম। এই আশ্রম পেরোতেই চন্দ্রনাথ পাহাড়ের ঢাল। রিকশা থেমে গেল। রিকশা থেকে নেমে আমরা পাহাড়ের ঢালে বেয়ে ওঠা শুরু করলাম। পাহাড় ঘিরে রয়েছে বেশ কয়েকটি মন্দির। নিমতলা মন্দির, ভবনী মন্দির, শ্রী শ্রী সম্ভুনাথ মন্দির এবং একদম চূড়োয় চন্দ্রনাথ মন্দির।

প্রত্যেকটি মন্দির সুন্দর। সম্ভুনাথ মন্দিরেই রয়েছে শিব লিঙ্গের প্রকৃত পাথরটি। যা আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বছর আগে অলৌকিকভাবে। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চুড়োয় ওটার পথে এই মন্দিরগুলোই হচ্ছে দর্শনীয় স্থান। পাহাড় কেটে কেটে তৈরি করা সিঁড়ি। সেই সিঁড়ি বেয়ে আমরা চূড়োয় উঠছি। কতোটুকু উঠছি জানি না। হঠাৎ চোখে পড়লো অপূর্ব সুন্দর এক ঝরনা। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে নেমে আসছে পরিষ্কার স্বচ্ছ পানি। এক দঙ্গল ছেলেমেয়ে ও্ই ঝর্নার পানিতে গোসল করছে। বড়ো অপরূপ সেই ছেলেখেলা! আমাদের পানি শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই বোতলে ঝরনার পানি ভরে নিলাম। আহ, কি মিষ্টি পানি! আবার আমাদের ওপরে ওঠা শুরু হলো। যতোই উপরে উঠছি, ততোই চারদিক পাহাড় যেন বিস্তৃত হচ্ছে। হঠাৎ এক জায়গায় দেখলাম একটা সেতুর মতো তৈরি করা। জানা গেলো ওখানে দাড়িয়ে নাকি হাজার বছর আগে ত্রিপুরা রাজ্যের রানী প্রতিদিন সূর্যকে পূজো করতেন। ওই সেতুতে দাড়িঁয়ে সোজা তাকালে সমুদ্র চোখে পড়বে। অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য। এতোক্ষন খেয়ালই করিনি। ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলাম প্রায় দু ঘন্টা কেটে গেছে। চুড়ার দেখা এখনো মেলেনি। উঠছি তো উঠছিই। আরো প্রায় আধঘন্টা পার হলো। ঠিক সেই সময় চন্দ্রনাথ মন্দিরের চূড়োটি চোখে পড়লো। লাফিয়ে উঠলাম আমরা। চলে এসেছি চুড়োয়। চন্দ্রনাথ মন্দিরে তখন কেউ নেই। নির্জন পাহাড়ের চূড়োয় শুধু আমি আর আমার বন্ধু দাড়িয়ে। মন্দিরের সামনে দাড়াতেই মন পবিত্র হয়ে গেলো। আড়াই ঘন্টা পাহাড়ে ওঠার ক্লান্তি নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো। বেশ কিছুক্ষণ মন্দিরের চারপাশে ঘুরে বেড়ালাম আমরা। এবার নিচে নামার পালা।

আপনাদের জন্য –:

  • চট্রগ্রাম থেকে সীতাকুন্ডের বাস ছাড়ে। দু ঘন্টার পথ। ভাড়া ২০ টাকা। ঢাকা থেকে যেতে চাইলে চট্রগ্রামের বাসে উঠে পড়ুন।
  • সীতাকুন্ড বাজারে নেমে পড়বেন। সীতাকুন্ডে ভালো আবাসিক হোটেল নেই। তাই থাকার জায়গা নিশ্চিত করে নিন।
  • পাহাড়ে ওঠার সময়ে হালকা কাপড় চোপড় পরাই ভালো। যেমন, জিন্স, টি শার্ট।
  • হ্যাভারস্যাকে পানি রাখুন। কারণ পাহাড়ে ওঠার পথে ঝরনা দেখার আগে পানি পাবেন না।
  • প্রচুর পরিমানে চকলেট সাথে নিন। কারণ পাহাড়ে উঠলে শরীর সুগারের পরিমান কমতে থাকে। ওপরে উঠবেন আর চকলেট খাবেন।
  • চুড়োয় ওঠার পথে ঝরনার পানিতে গোসল করে নিন। ভালে লাগবে।
  • বাসায় ফিরে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুটো প্যারসিটামল খেয়ে নিন।