সেইসব মাঠময়দান ।। খেলার মাঠ

  • by

সেইসব মাঠময়দান

এমন একটি সময় ছিল যখন খেলা ছিল আমাদের জীবনযাপনের অপরিহার্য অংশ, ছিল প্রাত্যহিক আনন্দের সঙ্গী। তাই বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছিল স্বতঃ ফূর্তভাবে খেলার মাঠ। কিন্তু কালের প্রবাহে ঘরোয়া খেলার দাপটে, কোথাওবা বিভিন্ন দলাদলিতে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অসহযোগীতাতে, কোথাও আবার দখলদারদের দখলবাজিতে সেইসব মাঠময়দান অতীতের ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। অথচ প্রতিটি মাঠের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে ছোটখাটো ইতিহাস প্রতিটি মাঠ এখনো হাত পারে আমাদের জীবনযাপনের অংশ। দেশের সেরকম কয়েকটি মাঠ নিয়েই এ বিশেষ আয়োজন।

ময়মনসিংহঃ সার্কিট হাউস মাঠ

বাবুল হোসেন

প্রাচীন জেলা শহর ময়মনসিংহের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ সার্কিট হাউস মাঠ। ষাটের দশকে এখানে স্টেডিয়াম নির্মিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এটিই চিল ময়মনসিংহের খেলার প্রথম ও প্রধান খেলার মাঠ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে মুলত ফুটবল খেলার প্রধান মাঠ ছিল প্রায় ছয় একর সরকারি জমির এ সার্কিট হাউস ময়দান।

ময়মনসিংহঃ সার্কিট হাউস মাঠ

ময়মনসিংহঃ সার্কিট হাউস মাঠ

আহমদ তৌফিক চৌধুরির ‘শহর ময়মনসিংহের ইতিকথা’ থেকে জানা যায়, ময়মনসিংহে খেলাধুলার বিকাশে এ মাঠের রয়েছে অন্যন্য ভূমিকা। প্রথমদিকে ফুটবল খেলাই ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। পরে জনপ্রিয়তা পায় ক্রিকেট। ময়মনসিংহের জমিদার মহারাজ শশীকান্ত আচার্য্ চৌধুরি কেমব্রিজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি নিয়ে ফিরে আসার পর সর্বপ্রথম ক্রিকেট খেলার প্রচলন করেন। ১৯১০ সালে এ শহরে পন্ডিতপাড়া অ্যাথলেটিক ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়।

তৎকালীন জেলা জজ জেডি কারগিল ছিলেন এ ক্লাবের প্রথম প্রেসিডেন্ট। পৃষ্টপোষক ছিলেন মুক্তগাছার মহারাজ। ১৯২৭ সালে কলকাতার মোহনবাগান ক্লাব পন্ডিতপাড়া ক্লাবের আমন্ত্রণে খেলতে আসে। ১৯২২ সাল থেকে টানা ১৮ বছর ফুটবলে এই পন্ডিতপাড়া ক্লাব লিগ চ্যাম্পিয়ন শিরোপা ধরে রাখে। এ ক্লাবের কিংবদন্তি ফুটবলার ছিলেন পাখী সেন। পরে মোহামেডানসহ অসংখ্য ক্লাব গড়ে ওঠে এই সার্কিট হাউস মাঠ ঘিরে।

ময়মনসিংহ  জেলা পরিষদ প্রকাশিত অধ্যাপক মাহমুদুল হাসানের ‘ময়মনসিংহের সাহিত্য ও সংস্কৃতি’  গ্রন্থ থেকে জানা যায়, সার্কিট হাউস মাঠকে ঘিরেই ফুটবল, ক্রিকেট ও হকিসহ নানা খেলার চর্চা থেকে অনেক খ্যাতিমান তারকা খেলোয়াড় গড়ে উঠেছেন। ময়মনসিংহের জমিদার শশীকান্ত আচার্য্য চৌধুরি ও গৌরীপুরের জমিদার ব্রজেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরি ছাড়াও ভারত বিভাগোত্তরকালে ময়মনসিংহের ক্রীড়াঙ্গনকে সজীব রাখার পেছনে ব্যাপক অবদান রাখেন সৈয়দ সিরাজুদ্দীন হোসেন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের টাঙ্গাইল, শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ খেলাধুরার পীঠস্থান ছিল এই সার্কিট হাউস মাঠ। কলকাতাসহ ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন শক্তিশালী দল ও তারকা খেলেয়াড়রা প্রায়েই প্রর্দশনী খেলতে আসতেন ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠে। আইএফএ শিল্ড বিজয়ী মোহনবাগান ক্লাব কয়েকবার ময়মনসিংহের পন্ডিতপাড়া অ্যাথলেটিক ক্লাবের সঙ্গে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলেছে, কিন্তু একবারও পন্ডিতপাড়াকে হারাতে পারেনি। ১৯৪৩ সালে সার্কিট হাউস মাঠে কলকাতার লিগ বিজয়ী ইস্টবেঙ্গল ক্লাব ময়মনসিংহ জেলা দলের সঙ্গে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলে ২-৩ গোলে হেরে যায়। সূর্যকান্ত শিল্ড, সুরেন্দ্র সরোজিনী শিল্ড, কিনডার্সলি কাপ, তাজমহল শিল্ডসহ অনেক বিখ্যাত টুর্নামেন্ট আয়েজিত হয়েছে এ মাঠে। অভিলাষ ঘোশ, সুধাংশু বোস, এস চক্রবর্তী, ননী গোস্বামী, হোমাঙ্গ মোহন বোস, এম দত্ত রায় (ভানু দত্ত), রাখাল মজুমদার, পাখী সেনের মতো তারকা খেলোয়াড়ের জন্ম হয়েছিল ময়মনসিংহে। জনশ্রুতি ছিল ময়মনসিংহ থেকে খেলোয়াড় না গেলে ঢাকায় ক্রিকেট অচলাবস্থার সৃষ্টি হতো।

চট্রগ্রামঃ জাম্বুরি মাঠ

  • এসএম আজাদ

চট্রগ্রামের সবচেয়ে বড় খেলার মাঠ হিসেবে কাগজে কলমে ১৬ একর আয়তনের আগ্রাবাদের জাম্বুরি মাঠের নাম সবার আগে উচ্চারিত হলেও দখলদারের কবলে পড়ে তার অস্তিত্ব এখন বিপন্ন। মাঠের ৬ একর জায়গাজুড়ে শিশুপার্ক করা হয়েছে এক যুগ আগে। বাকি ১০ একরের সাত একর এরই মধ্যে চলে গেছে ৫২ দখলদারের কবলে। যেটুকু অবশিষ্ট আছে সেখানে উন্মুক্ত পার্ক করার চিন্তা করছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় নগরজুড়ে দাবি উঠেছে, ‘জাম্বুরি মাঠে দখলযজ্ঞ নয়, খেলার স্টেডিয়াম চাই’।

চট্রগ্রামঃ জাম্বুরি মাঠ

চট্রগ্রামঃ জাম্বুরি মাঠ

জাম্বুরি মাঠ রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম নেতা, গবেষক সাখাওয়াত হোসেন মজনু সাপ্তাহিক ২০০০ কে বলেন, ১৯৪৯ সালের ১ জানুয়ারী পাকিস্তান ন্যাশনাল স্কাউট জাম্বুরি হয়েছিল চট্রগ্রামে। এর তিন দিন আগে আগ্রাবাদের ডাকাইত্যা বিল মাটি ভরাট করে বিশালকারের মাঠ তৈরির কাজ শেষ হয়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানে স্কাউটরা এতে অংশ নেয়। এ কারণে পরবর্তী সময়ে মাঠটি জাম্বুরি মাঠ নামে পরিচিতি পায়। মাঠের পাশে বহুতল কলোনি তৈরির সময় রাস্তা নির্মাণের কারণে বিশাল জাম্বুরি মাঠটি প্রথম দ্বিখন্ডিত হয়। ৬ একর জায়গা দখলে নিয়ে শিশুপার্ক নির্মাণের পর শুরু হয় সবজি চাষের নামে অবৈধ দখলদারের থাবা।  এভাবে অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলছে জাম্বুরি মাঠ। আগ্রাবাদ গণপূর্ত অধিদপ্তরের কার্যালয় থেকে বের হলে মূল ফটকের কাছেই জাম্বুরি মাঠ। পাশের কোনো উচু ভবনে দাড়িয়ে কেউ জাম্বুরি মাঠ খোঁজার চেষ্টা করলে নির্ঘাত ভূল করবেন। মাঠ কোথায়! এ যেন খন্ডে খন্ডে বিভক্ত সবজি ক্ষেত।

সংস্কৃতি কর্মী শওকত বাঙালি বলেন, ‘ছাত্রজীবনে এই মাঠে হেসে খেলে বড় হয়েছি। আজ সেখানে দখলের প্রতিযোগীতা। মাঠটির করুন দশায় চোখে পানি চলে আসে’। জাম্বুরি মাঠে এক সময় আশপাশের স্কুল গুলোর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতা অনুষ্টিত হতো। সারা বছর ধরে এখানে নান খেলাধুলার আয়োজন হতো। প্রতিদিন বিকালে ১০ – ১২ টি দলে কয়েকশ শিশু কিশোর ভাগ হয়ে এ মাঠে ফুটবল ক্রিকেট খেলত। নগরীর মধ্যে এত বিশাল খেলার মাঠ আর কোথাও ছিল না। আর এখন মাঠের মাঝখানে একচিলতে ছোট জায়গা সাক্ষ্য দিচ্ছে এক সময় এটিই ছিল চট্রগ্রামের বৃহত্তম মাঠ।

রাজবাড়ীঃ খানখানাপুর খেলার মাঠ

  • সৌমিত্র শীল চন্দন

শত বছরেরও বেশি প্রাচীন রাজবাড়ীর খানখানাপুর খেলার মাঠ এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে। বিখ্যাত রামকানাই শিল্ড ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হতো এ মাঠে। বর্তমানে মাঠটিতে তেমন কোনো টুর্নামেন্টের আয়োজন করা না হলেও নিয়মিতই চলে ফুটবল ও ক্রিকেট অনুশীলন।

রাজবাড়ীঃ খানখানাপুর খেলার মাঠ

রাজবাড়ীঃ খানখানাপুর খেলার মাঠ

উনিশ শতকের গোড়ার দিকের কথা। তখন ভাগ্যকুল  এস্টেটের জমিদারের কাচারীঘর ছিল খানখানাপুরে। এখানকার খাজনা তুলতেন রাজা বিপীন বিহারী রায়। রামকানাই কুন্ডু তখন এ অঞ্চলের বড় ব্যবসায়ী। তখন  এ এলকায় হিন্দুদের বাস ছিল অনেক বেশি। গান- বাজনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যাত্রা,  নাটক অনুষ্ঠিত হতো প্রায়ই। রামকানাই কুন্ডু ছিলেন চিরকুমার সাধক পুরুষ। রাজা বিপীন বিহারী রায়ের সহযোগীতায় খান খানাপুরের এ মাঠটিতে তিনি আয়োজন করেন ফুটবল টুর্নামেন্ট। তবে তখনো সেই টুর্নামেন্টের কোনো নামকরণ করা হয়নি। ১৯২৮ সালে রামকানাই কুন্ডুর নামের একটি শিল্ড তৈরি করেন। সাড়ে চার ফুট উচু এবং সাড়ে তিন ফুট প্রস্থের কাঠের তৈরি শিল্ডটির চারপাশে ১১ খেলেয়াড় ও একটি বল, ওপরে ষষ্ঠ জর্জের মুকুট সবই ছিল চাদি রুপা দিয়ে তৈরি। ধারণা করা হয় সাড়ে চারশ ভরি রূপা ছিল শিল্ডটিতে। তখন থেকে প্রতিবছর ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্টিত হতো এ মাঠে। এলাকার বায়ো বৃদ্ধরা জানান, অবিভক্ত বাংলার নামকরা ফুটবল দল ও খেলোয়াড়রা ও মাঠে খেলে গেছেন। এর মধ্যে তারা কলকাতা মোহমেডান ও মোহনবাগানের নামটা বলতে পেরেছেন।

খানখানাপুর এলাকার যুবক মো. লিটন জানালেন, তারা নিয়মিতই এই মাঠে ফুটবল অনুশীলন করেন। সত্তরোর্ধ্ধ আবুল কালাম জানালেন , ফুটবল টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই লোকে লোকারণ্য হয়ে যেত এলাকা। মাঠের চারদিকে দর্শকে ঠাসা থাকত। সেমিফাইনাল ও ফাইনাল খেলার দিন শিল্ডটি মাঠের চারদিকে ঘোরানো হতো। বিকালে খেলা হলেও সকাল ১০ টা থেকে মানুষ আসতে শুরু করত। তারা সঙ্গে করে চিড়া মুড়ি নিয়ে আসত। তিনি নিজে দেখেছেন সেসব। বাংলাদেশের অন্য কোনো মাঠে এত দর্শক দেখেননি বলে জানান তিনি। বছর ১৫ আগে সর্বশেষ এই মাঠে রামকানাই ফুটবল টুর্নামেন্টটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল।  এরপর আর কোনো বড় ধরনের খেলার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। খানখানাপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাবিবুর রহমান হবি নিজেও এক সময় খেলোয়াড় ছিলেন। খানখানাপুর ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের হয়ে টুর্নামেন্টেও অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্ত প্রতিবছর রামকানাই শিল্ড ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় শিল্ডের ওপর রুপার ফুটবল  এবং খেলোয়াড়দের প্রতীকগুলো চুরি হয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই সময় তৎকালীন গোয়ালন্দ মহকুমার প্রশাসক আবদুল হাই সরকার একদিন সুরাজ মোহিনী ইনস্টিটিউট পরিদর্শনে এলে তাকে শিল্ডটি দেখিয়ে এটি পুণঃনির্মাণ করতে সাহায্য চেয়েছিলেন। তিনি  তখন ১৫ শ টাকা দিয়েছিলেন। আমরা আরো কিছু টাকা পয়সা তুলে কুষ্টিয়া গিয়ে চারজন খেলোয়াড় ও একটি বলের প্রতীক দিয়ে শিল্ডটি পুনরায় তৈরি করি। বর্তমানে শিল্ডটি ব্যবসায়ী সমিতির হেফাজতে আছে। তবে ইচেছ থাকা স্বত্তেও পৃষ্টপোষকতা ও প্রকৃত সংগঠকের অভাবে এখন আর টুর্নামেন্ট আয়োজন সম্ভব হয় না।

যশোর: শামস উল হুদা স্টেডিয়াম

মামুন রহমান

যশোরের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী খেলার মাঠ শামস উল হুদা স্টেডিয়াম। এখন দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো আর গ্যালরি এর শোভা বাড়ালেও প্রথমে এখানে ক্রীড়াচর্চা শুরু হয়েছিল খোলা প্রান্তরে এবং পরে বাশের বেড়া ঘেরা মাঠে। এর অবস্থান শহরের পশ্চিমে। চারপাশ ঘিরে রয়েছে যশোর এমএম কলেজ, পৌরপার্ক, ডা. আবদুর রাজ্জাক কলেজ ও খড়কি কারবালা এলাকা।

যশোর শামস উল হুদা স্টেডিয়াম

যশোর শামস উল হুদা স্টেডিয়াম

যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুজ্জামান জামান, সেখানে আগে খোলা মাঠ ছিল। জমিটি যশোর পৌরসভার। পৌর কর্তৃপক্ষ খোলা ওই স্থানটি যশোর সম্মিলনী ইনস্টিটিউটকে দিয়েছিল শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য। বিকালে সেখানেই ফুটবল খেলতেন যশোরের ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ। এক পর্যায়ে খেলার মাঠ হিসেবে আলাদা করার জন্য খোলা স্থানটি বাশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়। খোলা স্থানে একটি স্টেডিয়াম করার স্বপ্ন ছিল তখনকার ক্রীড়াপ্রেমীদের। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন শামস উল হুদা, সুধীর ঘোষ, একরামুল হক, মশিয়ার রহমান সরদার, বজলুর রহমান, চিত্তরঞ্জন বাবু প্রমুখ। তাদের আন্তরিক চেষ্টায় ১৯৫৯ সালে যশোর স্টেডিয়ামের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামটি এখন খুলনা বিভাগের সেরা স্টেডিয়াম। প্রথমে এর নাম যশোর স্টেডিয়াম থাকলেও ১৯৮৮ সালে নামকরণ করা হয় শামস উল হুদা স্টেডিয়াম। শামস উল হুদা জীবদ্দশায় ৩৭ বছর যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। খেলাধুলার মনোন্নয়নে তার অসামন্য অবদানের কারণে তার নামই এর নামকরণ করা হয়। স্টেডিয়ামটি এখন বিসিবির প্রথম শ্রেণীর একটি ক্রিকেট ভেন্যু। ১৯৭৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী এ স্টেডিয়ামে যশোর জোন বনাম বরিশাল বিভাগের মধ্যে প্রথম ক্রিকেট খেলা হয়। ১৯৭৭ সালের ১১ জানুয়ারী যশোর স্টেডিয়ামে খেলতে আসে ইংল্যান্ডের শৌখিন ক্রিকেট দল মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব। ১৯৭৮ সালের ৬ জানুয়ারী সাউথ জোনের সঙ্গে এ মাঠেই খেলে শ্রীলঙ্কা দল। ক্রিকেট ছাড়াও দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে এ মাঠে কলকাতা মোহামেডান, মোহনবাগান, ইরান, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড জাতীয় ফুটবল দল খেলে গেছে।

গাইবান্ধাঃ হেলাল পার্ক ঈদগাহ মাঠ

  • আবু জাফর সাবু

হেলাল পার্ক ঈদগাহ মাঠ থেকেই জন্ম গাইবান্ধার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন খেলার মাঠ শাহ আবদুল হামিদ স্টেডিয়ামের। এ মাঠে ৬০ বছর আগে প্রথম খেলাধুলা শুরু হয়েছিল।

১৯৫৭ সাল পর্যন্ত গাইবান্ধা শহরের নিজস্ব কোনো খেলার মাঠ ছিল না। আন্তুঃ স্কুল ও মহকুমা পর্যায়ের সব গুরুত্বপূর্ণ ফুটবল খেলা এবং অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগীতা হতো শহরের কেন্দ্রস্থলের মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে, নয়তো পাশের ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। তখন ক্রিকেট এতটা জনপ্রিয় ছিল না। ফুটবল আর

গাইবান্ধাঃ হেলাল পার্ক ঈদগাহ মাঠ

গাইবান্ধাঃ হেলাল পার্ক ঈদগাহ মাঠ

অ্যাথলেটিক্স ছিল জনপ্রিয় খেলা। তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক হেলাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরি শহরের দক্ষিণে রেললাইনের পাশে বিনোদনের জন্য একটি পার্ক এবং কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এজন্য ৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। অনেকে স্বেচ্চায় জমি দান করেন। বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক প্রয়াত ফজলুর রহমান চেচারু মিয়াও এই খেলার মাঠে জমি দান করেছিলেন বলে জানা গেছে। মহকুমা প্রশাক হেলাল চৌধুরি নিজেও একজন ভালো খেলেয়াড় ছিলেন। তাই তার ইচ্ছে ছিল এই ঈদগাহ মাঠেই দুই ঈদের নামাজের এবং পাশাপাশি অন্য সময় খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করা হবে। ১৯৫৭ সালে অধিকৃত জমির পুর্বপাশে একটি পুকুর খুঁড়ে সেই মাটি দিয়ে ঈদগাহ মাঠ নির্মাণ করা হয়।  মহকুমা প্রশাসক ঈদগাহ মাঠ পরিচালনার জন্য একটি ট্রাস্ট গঠন করে মাঠটি ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করেন। শর্ত ছিল, মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা পরিচালিত ফুটবলসহ সব ধরনের খেলা এ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর প্রয়োজনের তাগিদে ঈদগাহ মাঠ পাশের জমিতে স্থানান্তর করে এটি গাইবান্ধা স্টেডিয়াম হিসেবে পূর্ণাঙ্গ খেলার মাঠে রূপান্তরিত হয়। গাইবান্ধা কৃতী সন্তান, বাংলাদেশ গণপরিষদের প্রথম স্পিকার শাহ আবদুল হামিদের নামানুসারে প্রাচীন  এ খেলার মাঠের নামকরণ করা হয়েছে ‘শাহ আবদুল হামিদ স্টেডিয়াম’।

মুন্সিগঞ্জঃ ঐতিহ্যবাহী ‘বড় মাঠ’

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল

মুন্সিগঞ্জের কীড়াঙ্গনের প্রাণকেন্দ্র বড় মাঠ। এ নামেই মাঠটি পরিচিত ছিল আশির দশক পর্যন্ত। ৯৩ সালে এখানে নির্মিত হয় স্টেডিয়াম। তবে মূল মাঠের একটি অংশ স্টেডিয়ামের পুবপাশে বাইরে পড়ে আছে অকেজো হয়ে।

মুন্সিগঞ্জঃ ঐতিহ্যবাহী ‘বড় মাঠ’

মুন্সিগঞ্জঃ ঐতিহ্যবাহী ‘বড় মাঠ’

যে নামেই ডাকা হোক না কেন-  এই মাঠ কালের সাক্ষী। বরেণ্য সব ক্রীড়াবিদের বিবরণভূমি ছিল এটি।  এই মাঠে ফুটবলের স্বর্ণযুগে ’৮০, ৮২’ ও ৮ ‘ সালে বাংলাদেশের আলোচিত ‘কালিপদ দাস স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট’ সাড়া জাগিয়েছিল। ঢাকার মোহামেডান, ওয়ান্ডারার্স, ওয়ারী ও ভিক্টোরিয়া ক্লাবের খেলেয়াড়রা তখন এ মাঠে খেলেছেন। ’৭৮ সালে এশিয়ান গেমসের বাছাইপর্বের অনূর্ধ্ধ ১৮ জাতীয় দল প্রদর্শণী ম্যাচও হয় এ মাঠে। আর এই মাঠ ঘিরেই শহরের মাঠপাড়া গ্রামের নামকরণ হয়।

১৮৮৫ সালে শহরের মুন্সীগঞ্জ হাইস্কুল প্রতিষ্ঠায় সময় এ মাঠের উৎপত্তি। স্কুলটির যাবতীয় ক্রীড়াকান্ড পরিচালিত হতো এ মাঠে। তৎকালীন এই অঞ্চলের জমিদার আক্রামুন্নেছার পরিবারের জমিতে মুন্সীগঞ্জ হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। স্কুলের জন্য তাই এই মাঠসহ আশপাশের বিপুল পরিমাণ জমি দান করে পরিবারটি। বিকাল হাতেই মানুষের বাধভাঙ্গা স্রোত বইত এ মাঠ ঘিরে। কেউ আসত খেলতে আর কেউ আসত খেলা দেখতে। চল্লিশ থেকে পঞ্চাশের দশকে ফুটবলের অনেক প্রখ্যাত খেলেয়াড়ের স্মৃতি জড়িয়ে আছে  এ মাঠ ঘিরে। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মন্মথ মূখার্জি, আইজি রকিক খন্দকার, কালিপদ ধর, কালিপদ দাস, লোকমান, ষাটের দশকের আরজান খান, প্রভাত দাস, প্রদ্যুত দাস, প্রতাপ শঙ্কর হাজরা, নজরুল ইসলাম, ৭০ এর দশকের নওশের, শরীফ, মাসুম চৌধুরি, কিসলু, খোকা, আঙ্গুর, ফিরোজ, ৮০ এর দশকের জাতীয় দলের অধিনায়ক স্বপন দাস, তারিক কাসেম খান মুকুল, আরিফ, আশরাফ বাচচু, শঙ্কর দাস মুকুল, মঈন কাদের রবিন, বাহারুল আলম প্রমুখ। এই মাঠে ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেট টুর্নামেন্টও হতো। ভবানী, আক্রম, নুরুল ইসলাম অনু, নুরউদ্দিন চৌধুরি, আনোয়ার হোসেন, আঙ্গুর,  হারুনসহ অনেকেই তখন ক্রিকেট খেলতেন। এই মাঠের খেলেয়াড় সে সময়ে পাকিস্তানের সেরা দৌড়বিদ ছিলেন আবদুল খালেক ও শাহ আলম। এই মাঠের খেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,  রাজনৈতিক সভাকে কেন্দ্র করেও উৎসবে মেতে উঠতেন মুন্সিগঞ্জবাসী।

মাগুরা: নোমানি ময়দান

  • লিটন ঘোষ জয়

মাগুরার ঐতিহ্যবাহী খেলার মাঠটির নাম নোমানি ময়দান। খেলাধুলা থেকে শুরু করে গান বাজনা, যাত্রা, সার্কাস, কবিগান, জারিগান, সারিগান, পালাগান, চৈতেগান, পুতুল নাচ, লাঠিখেলা, ঝাপান খেলা, চৈত্রসংক্রান্তির মেলা, বৈশাখীমেলা, বিজয়ামেলা, বাণিজ্যমেলা সিহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনেক আগে থেকেই অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এ মাঠে। এটি শহরের প্রধান ঈদগাহ মাঠও।

মাগুরা নোমানি ময়দান

মাগুরা নোমানি ময়দান

এক সময় পুরো নোমানি ময়দানটাই ছিল খেলার মাঠ; কিন্তু এখন কেবল খেলার মাঠ নয় এর চারপাশে গড়ে উঠেছে আনসার ক্যাম্প, দিনান্ত ক্লাব, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, পানি উন্নয়ন বোর্ড বাংলো মধুমতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামান মিলনাতায়ন ও মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ। এক সময় নোমানি ময়দানে সারা বছরই চলত নানারকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলা। কিন্তু কালের বির্বতনে তা আজ ইতিহাস হতে চলেছে। এই নোমানি ময়দান থেকেই মাগুরায় প্রথম ওড়ানো হয় স্বাধীনতার পতাকা। ইতিহাস ও স্থানীয়দের কথা থেকে জানা যায়, পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কুমার নদীতে চর পড়ে পড়ে তা এই মাঠে পরিণত হয়। এখনো নোমানি ময়দান সকালে বিকালে মানুষের কোলাহলে মুখর থাকে। শুধু ক্রিকেট, ফুটবল বা দৌড়ানোর জন্য মানুষ এখানে আসে না, আড্ডা জমাতেও আসে। বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে নানা ধরনের আড্ডা। শহরের বিভিন্ন প্রাণ্ত থেকে শিশু কিশোররা আসে খেলাধুলা করতে। মাগুরা জেলার  ইতিহাস ঐতিহ্য গবেষনা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও গবেষক ডা. কাজী  তাসুকুজ্জামান জানান, ১৯৪৮ সালে তৎকালীন যশোর মহকুমা জেলা প্রশাসক জেলা প্রশাসক নোমান সাহেব মাঠটি নোমনি ময়দান হিসেবে ঘোষণা করেন। মাঠটি আগে গ্রিণ পার্ক হিসেবে পরিচিত ছিল। নোমানের নামের সঙ্গে মিল রেখেই নামকরণ করা হয় নোমানি ময়দান। এই ময়দান থেকেই স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ ছাড়া ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র ট্রেনিং  এ ময়দান থেকেই হয়।

কুমিল্লাঃ সমতল  বিরানভূমিই ছিল খেলার মাঠ

  • ইয়াসমীন রীমা

কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্র ধর্মসাগরের পুর্বপারে নৈসর্গিক পরিবেশে অবস্থিত কুমিল্লা জেলা স্কুল মাঠে অনেক আগে থেকেই খেলাধুলা হতো। স্কুলটি প্রতিষ্টিত হয়েছিল ১৯৩৭ সালে। ১৯৩০ সালের আগে জেলাভিত্তিক খেলাধুলা হতো কুমিল্লার বিসিক শিল্প এলাকার খোলা জায়গায়। জনশ্রুতি রয়েছে, কুমিল্লার প্রাচীন বিদ্যাপীট ইউসুফ বহুমুখী কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে তৎকালীন ভারতের আগরতলা কিশোর একাদশের সঙ্গে কুমিল্লা জেলা কিশোর একাদশেল এক প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্টিত হয়েছিল। কুমিল্লার শিশু কিশোর যুবকদের খেলার অন্য জায়গাগুলো হচ্ছে এয়ারপোর্ট এলাকার খোলা জায়গা ও ইপিজেড এলাকার সমতল বিরাণভুমি।

কুমিল্লাঃ সমতল বিরানভূমিই ছিল খেলার মাঠ

কুমিল্লাঃ সমতল বিরানভূমিই ছিল খেলার মাঠ

কুমিল্লা জেলা স্কুল সংলগ্ন জায়গায় গড়ে ওঠে কুমিল্লা স্টেডিয়াম। দীর্ঘদিন স্টেডিয়ামের অবকাঠামো বলতে ছিল পূর্বদিকের ড্রেনের পাশে বাঁশের বেড়া দেয়া সীমানা। দক্ষিণ দিকের জিলা স্কুলের দিকে সীমানটি ছিল  ইট সিমেন্টের। স্টেডিয়াম ভবনটি দোতলা হলেও প্যাভিলিয়নটি ছিল সেমিপাকা, পাটাতন ছিল কাঠের। মাঠের পশ্চিম প্রান্তেও একটি ছোট প্যাভালিয়ন ছিল। ১‘৯৬৯ সালে তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান স্পোর্টস ফেডারেশনের অর্থায়নে নুতন প্যাভালিয়নের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ক্রিকেট প্যাভিলিয়ন তৈরি হয় দক্ষিণ প্রান্তে আর ফুটবল প্যাভিলিয়ন তৈরি হয় পশ্চিম প্রান্তে। কুমিল্লা স্টেডিয়ামে প্রথম বিদেশী ফুটবল দল হিসেবে খেলতে আসে ইন্দোনেশিয়া এবং তারপর শ্রীলঙ্কা। তবে খেলা দুটিই ছিল প্রদর্শনী ফুটবল ম্যাচ।

সিলেট: টিপারছড়া গলফ ফিল্ড

  • ইসমাইল মাহমুদ

অপরিকল্পিত নগরায়ন, যেখানে সেখানে স্থাপনা নির্মাণ  এবং ভুমিদস্যুদের কারণে গত কয়েক বছরে সিলেট অঞ্চল থেকে হারিয়ে গেছে ছোট বড় ৩ শতাধিক খেলার মাঠ। তবে এখনো অস্তিত্ব ধরে রেখেছে সিলেটের অন্যতম প্রাচীন খেলার মাঠ মৌলভিবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার টিপরাছড়া গলফ ফিল্ড। তবে এখানে এখন আর গলফ খেলা হয় না।

সিলেটঃ টিপারছড়া গলফ ফিল্ড

সিলেটঃ টিপারছড়া গলফ ফিল্ড

২৬০ বছর আগে ব্রিটেন থেকে টি প্ল্যান্টারদের আগমন ঘটতে থাকে সিলেট অঞ্চলে। তাদের খেলাধুলার জন্য ফিনলে চা কোম্পানির টিপরাছড়া চা বাগানে গড়ে তোলা হয় এ গলফ ফিল্ড। আশপাশের সব বাগানের ব্রিটিশ টি প্ল্যান্টাররা প্রতিদিন বিকালে ওই ফিল্ডে গলফ খেলে স্ত্রী সঙ্গী সাথীদের নিয়ে সময় কাটাতেন। টি প্ল্যান্টারদের খেলার মাঠটি এখন স্থানীয় শিশু কিশোরদের বৈকালিক খেলাধুলায় ব্যবহৃত হয়। পাহাড়ি জনপদে উচু নিচু ঢিলার মতো মাঠটি পর্যটকদের দৃষ্টিনন্দন স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এ মাঠটিতে ১৯৯০ – ৯১ সালে সর্বশেষ গলফ খেলা অনুষ্টিত হয়। মাঠটি এতই সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর যে, এর সবুজ ঘাসের উপর শুয়ে বা বসে থাকলে যেন স্বর্গের সুখ পাওয়া যায়। মাঠটির দুইপাশে সবুজাভ চা বাগান, একপাশে রাবার বাগান মাঠটির সৌন্দর্য বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। মাঠের মাঝ বরাবর মেঠোপথ দিয়ে যখন কেউ যাতায়াত করেন তখন মাঠের একপ্রান্তে দাড়িয়ে থাকলে মনে হয়, সবুজের মধ্যে রং তুলিতে ভিন্ন রঙের আচড় দিয়ে চলে যাচ্ছেন তিনি। প্রতিদিনই অসংখ্য  পর্যটকক সিলেট অঞ্চলের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহাসিক এ গলফ ফিল্ডটি দেখতে ভিড় করছেন।

ব্রাক্ষনবাড়িয়াঃ নিয়াজ মোহাম্মদ স্টেডিয়াম

  • সীমান্ত খোকন

ব্রাক্ষণবাড়িয়ার প্রধান ও ঐতিহ্যবাহী খেলার মাঠ নিয়াজ মোহাম্মদ স্টেডিয়াম। এটি ব্রাক্ষনবাড়িয়া শহরতলির কাউতলী এলাকায় অবস্থিত। ১৯৩৬ সালে নির্মিত মাঠটিতে বর্তমানে পূর্ব ও পশ্চিম দিকে গ্যালরি ও  একটি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। এক সময়  এই মাঠে অনেক খেলাধুলা হলেও এখন তা অনেকটাই ইতিহাস। গত দেড় বছরে এই মাঠে দুটি টুর্ণামেন্ট অনুষ্টিত হয়েছে।  একটি জেলা ক্রিকেট লিগ এবং একটি স্কুল টুর্নামেন্ট। ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরি (মন্টু) জানান, মাঠটি তৈরি হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন খেলাধুলায় জমজমাট ছিল। আশির দশকে এখানকার ক্রিকেট টুর্নামেন্ট বিশ্বখ্যাত ও আর্ন্তজাতিক খেলেয়াড়দেরও আনা হতো। কিন্তু ১৯৯১ সালের পর থেকে

ব্রাক্ষনবাড়িয়াঃ নিয়াজ মোহাম্মদ স্টেডিয়াম

ব্রাক্ষনবাড়িয়াঃ নিয়াজ মোহাম্মদ স্টেডিয়াম

নীতিনির্ধারকদের দুর্নীতি ও অবহেলায় মাঠটি তার অতীত গৌরব হারিয়ে ফেলেছে। সাবেক খেলেয়াড়দের দলাদলি, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অসহযোগীতা ও খেলাকে কেন্দ্র করে দুই দলের দাঙ্গা হাঙ্গামায় এখানে খেলাধুলা কমে গেছে। মাঠটির আয়তনও কমে গেছে। মাঠের দায়িত্ব পালনকারীদের অদূর দর্শিতার কারণেই এ মাঠের এমন করুন দশা। এই কারণে ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলায় খেলোয়াড়ের সংখ্যাও কমে গেছে। যারা আছেন তারাও এখানে খেলার আগ্রহ দেখান না।

বরিশালঃ বেলস পার্ক থেকে বঙ্গবন্ধু উদ্যান

সুশান্ত ঘোষ

বরিশালের ইতিহাস আর ঐতিহ্য মিশে আছে বঙ্গবন্ধু উদ্যানকে ঘিরের।  এই উদ্যান যেমন ব্রিটিশ নির্মাণ উদ্যোগের স্মারক, তেমনি এর সঙ্গে মিশে আছে আমাদে জাতীয় জীবনের নান ঘটনাও। আর শিশু কিশোর যুবকদের খেলার মাঠ হিসেবেও এটি জুগিয়ে আসছে নির্মল আনন্দ।

বরিশালঃ বেলস পার্ক থেকে বঙ্গবন্ধু উদ্যান

বরিশালঃ বেলস পার্ক থেকে বঙ্গবন্ধু উদ্যান

এন ডি বিটনেস বেল ১৮৯৬ সালে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে বরিশালে আসেন। নান কারণেই তনি বরিশালে প্রান্তঃ স্মরণীয় হয়ে আছেন। বরিশালে বেল সাহেব ও খান বাহাদুর হেমায়েত উদ্দিনের প্রচেষ্ঠায় মুসলিম ছাত্রদের শিক্ষার জন্য ‘বেল ইসলামিয়া হোস্টেল’ নামে একটি হোস্টেল নির্মাণ করা হয়। বেল সাহেবের আরো অনেক অবদান রয়েছে। তবে বরিশালবাসী তাকে আরো অনেককাল স্মরণ করবে বঙ্গবন্ধু উদ্যোনের জন্য। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এটি বেলস পার্ক নামে পরিচিত ছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার এটির নামকরণ করে বঙ্গবন্ধু উদ্যান। বঙ্গবন্ধু উদ্যানটি লম্বায় প্রায় হাজার ফুট। প্রস্থে প্রায় ৬শ ফুট। উদ্যান ঘিরে রয়েছে ওয়াকওয়ে। রয়েছে অসংখ্য বাহারি বৃক্ষ। উদ্যানের উত্তর পাশের হ্রদটি এর সৌন্দর্যকে বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। উদ্যানের দক্ষিণ পাশে রয়েছে বিভাগের সবচেয়ে বড় ম্যুরাল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর এই ম্যুরালটি শিল্পি আমিনুল হাসান লিটু ও শিল্পি বাবুর তৈরি। এখানে এখন সকাল সন্ধ্যায় হেটে বেড়ান কয়েক হাজার মানুষ। এখানে অনেক ঐতিহাসিক জনসভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। কৃষি ও শিল্প প্রদর্শনী, বৃক্ষমেলা, বাণিজ্যমেলাসহ সব পর্যায়ের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে  এখানে।

ভোলাঃ গজনবী স্টেডিয়াম

ছোটন সাহা

শিশু কিশোর থেকে শুরু করে ভোলার সব বয়সের মানুষকে ক্রীড়ামুখী করে তুলতে এক বিরাট ভূমিকা পালন করে আসছে গজনবী স্টেডিয়াম। সেই ১৯৬৮ সাল থেকে অনেক খ্যাতিমান খেলেয়াড়ের বেড়ে ওঠায় ভূমিকা রাখা মাঠটি এখন নানা সমস্যায় অনেকটাই বেহাল। কয়েক বছর ধরেই গ্যালারি, প্যাভিলিয়ন ও সীমানাপ্রাচীর জীর্ণ হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

ভোলাঃ গজনবী স্টেডিয়াম

ভোলাঃ গজনবী স্টেডিয়াম

জেলা ক্রীড়া সংস্থাসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৮ সাল থেকে ভোলা পৌরসভার হেলিপ্যাড রোড এলাকায় অবস্থিত মাঠটি অযত্ন অবহেলায় পড়ে ছিল। স্থানীয় ক্রীড়ানুরাগী ও সংগঠক আলতাজের রহমান, খোরশেদ আলম, সামসুদ্দিন মিয়া ও লিয়াকত হোসেন লিকু মিয়ার প্রচেষ্টায় ১৯৮০ সালে এটি পূর্নতা পায়। ১৯৯২ সালে সাবেক জাতীয় দলের ফুটবলার, ভোলার দৌলতখানের কৃতী সন্তান গজনবীর নামে এর নাম রাখা হয়।

বর্তমানে ৫ একর ৪২ শতাংশ জমির ওপর স্টেডিয়ামটি স্থাপিত রয়েছে। ৩ টি গ্যালরিতে ২ হাজার ৮০০ দর্শকের বসার স্থান রয়েছে। তবে আসন ছাড়াও মাঠের চারদিকে ৮ হাজার দর্শক খেলা উপভোগ করতে পারেন। এ মাঠে খেলেই সত্তরের দশকে জাতীয় দলের হয়ে খেলতেন গজনবী। আশির দশকে মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন ও রুহুল আমিন একইভাবে ভোলা ছাড়িয়ে জাতীয় দলের হয়ে খেলতেন। বর্তমানের কৃতী ফুটবলার আমিনুল ইসলাম ভোলারই সন্তান। প্রতিবছরই ক্রিকেট ও ফুটবলের বড় বড় টুর্নামেন্ট হয় এ মাঠে। ওইসব খেলায় দেশের বিখ্যাত খেলোয়াড় ছাড়াও বিদেশী খেলেয়াড়রাও অংশ নেন।

নেত্রকোনাঃ মুক্তারপাড়ার মাঠ

সঞ্জয় সরকার

নেত্রকোনা জেলা শহরের ঐতিহ্যবাহী খেলার মাঠ হচ্ছে মোক্তারপাড়া মাঠ। মাঠটি ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্টিত।  এখানকার অন্য বড় মাঠ সাতপাই স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৮ সালে। ‍দুটি মাঠেই সারা বছর ফুটবল ও ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলা অনুষ্ঠিত হয়। শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় অবস্থিত

নেত্রকোনাঃ মুক্তারপাড়ার মাঠ

নেত্রকোনাঃ মুক্তারপাড়ার মাঠ

মোক্তারপাড়া মাঠটি এক সময় ফুটবলের মাঠ হিসেবে পরিচিত ছিল। স্বাধীনতা পুর্বকালে এ মাঠে যুগমায় শিল্প কাপ, নওয়াব আলী গোল্ড কাপসহ, আন্তজেলা গোল্ডকাপ এবং আন্তঃস্কুল কলেজের বিভিন্ন ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। মোক্তারপাড়া মাঠে এখন খেলাধুলার পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভা সমাবেশ, মেলা, অনুষ্ঠান এবং ঈদের সময় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। তবে পরিতাপের বিষয়, স্বাধীনতার পর ৪৩ বছরেও এ মাঠটির কোনো উন্নয়ন হয়নি। দর্শকের জন্য কোনো গ্যালরি নির্মিত হয়নি। দর্শকের খোলা মাঠে বসে খেলা উপভোগ করতে হয়। তবে  আশার কথা হচ্ছে এ শহরের শিশু কিশোর যুবকদের ক্রীড়ামুখী নির্মল বিনোদনের উৎস হয়ে এখনো এ মাঠটি এক বিশাল সামাজিক ভূমিকা রেখে চলেছে।