বিষন্নতায় যার মন

  • by

বিষন্নতায় যার মন

ডা. এস কে. অপু

হঠাৎ করে যদি পিতার আদুরে ছেলেমেয়ে তাদের পিতার মৃতুর খবর শুনেন অথবা যদি কেহ তার জীবনের একমাত্র চরম পাওয়া আত্মসম্মান হারিয়ে বসেন- আর তখনি মনের মধ্যে বিরাজ করে তোলপাড় যা থেকে জন্ম নেয় হারানোর বেদনা তা থেকেই বিষাদ।

মানুষ তো কতোই বিষাদমাখা চিন্তা নিয়ে দিন কাটায়। আমাদের যতো মিষ্টি মধুর সঙ্গীত বেজে উঠে তা কী বিষাদ মাখা নয় ? আবার কখনো আপনারাই বলে উঠতে পারেন যে, একজনের বিষাদে ভুগার কোন না কোন কারণ আছে। আবার এমনো দেখা যায় মোটেই কারণ নেই কিন্তু সে লোক অত্যন্ত বিষাদবোধ করেছেন। যাকে আমরা বিষাধিক্য রোগের কথা ভাবতে পারি।

আর প্রতিদিন যখন কেহ বিষাদবোধ করতে থাকেন বা বিষাধিক্য দেখা দেয় তা থেকেই তো জন্ম নেয় বিষন্ণতা ডিপ্রেশন।

একটা কিছু ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে বলে বসলেন “লোকটির বিষন্নতার কারণ সেই ঘটনাটি। কিন্তু নাও হতে পারে। আবার হতেও পারে। এমনকি আগে কখনো এরকম ছিলো না কিন্তু এ ঘটনাটিই হতে পারে বিষন্ণতার প্রিসিপেটিং ফ্যাক্ট বা সুচনাকারী।

সবার জীবনেই অনেক কিছু ঘটনা ঘটে। সবাই নয় কেহ কেহ ডিপ্রেশনের কারণ হতো তবে সবাই একদিন না একদিন বিষন্নতায় ডুবে যেতো। এ রোগ বর্তমানে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শতকরা ১৫ জনই বিষন্নতা রোগে ভুগেন। এদের শতকরা ৪ জনই ভুগে আবার বিষাধিক্যে।

গবেষণার ফলে দেখা গেছে জৈবিক কারণ ছাড়াই কঠিন ও একঘেয়েমীপূর্ণ এবং নিজেকে ছোট করে সমাজে দেখার জন্য মহিলারা বেশি বিষন্নতার রোগে ভুগেন। ভাবা উচিত নয় যে, শুধু সমাজের উপরওয়ালা বা টাকাওয়ালা লোকদেরই এ বিষন্ণতাবোধ যেমন ডিপ্রেশন ও অন্যান্য রোগের উপসর্গ হতে পারে বিষন্ণ। কিংবা কেউ মানসিক রোগে আক্রান্ত যা থেকে শুরু হতে পারে বিষণ্ণতাবোদ। আবার সিজোফ্রেনিয়ার রোগী বিষণ্ণ হতে পারে।

যখন কোন ডিপ্রেশন রোগী পুরোপুরি অনুভূতিহীণতা নিয়ে আসে অর্থ্যাৎ যার  অনুভুতি সম্পূর্ণ অসার হয়ে যায়। তাকে বলা হয় নামবনেস অব ফিলিং।

কোন কোন ডিপ্রেশন রোগীর বিষণ্ণতা এতা তীব্র হয় যেনো সে একেবারে মন্থর হয়ে যায় এবং তার চিন্তাশক্তি সম্পূর্ণ লোপ পেয়ে গেছে বলে মনে হয়। কোন কিছুতেই সাড়া দেয় না সেটাই জড়ত্ব।

কোন রোগী সকাল থেকেই প্রচুর বিষাদ নিয়ে বসে থাকে। আবার কোন রোগীর মুখে হাসি দেখা দেয়,  সে হাসি কান্নার হাসি। বেদনার হাসি। যাকে ‘স্মাইলিং ডিপ্রেশন’ বলি। এ রোগী যখন কান্না শুরু করে তাকে আর সহজে থামানো যায়।

আবার এমন রোগী আছে বিষন্নতায় শুধু অস্থির হয়ে পড়ে। সারাক্ষণ মাথায় নানা দুঃশ্চিন্তা থাকে। যার জন্য অস্থির ও অশান্ত। তখন এ রোগীকে অস্থিরতাপূর্ণ বিষণ্ণতা  বলি।

কোন কোন রোগী আছে তার প্রচুর টাকা পয়সা থাকা স্বত্তেও মনে করে ভীষণ গরিব। তার পরিবার ছেলেমেয়ে না খেয়ে সব মরে যাবে। এ দুশ্চিন্তাগ্রস্থ অবস্থাকে বলে ‘ডিলিউশান’ অব পোর্ভাটি। কারণ তখন রোগীরা এতো নৈরাশ্যবাদী হয়ে পড়ে যার কারণে তার যুক্তিহীণ বিশ্বাসও মেনে নেয় সাংঘাতিকভাবে। যার জন্য অলীক বিশ্বাসও মেনে নেয় সাংঘাতিকভাবে। যার জন্য অলীক বিশ্বাস মনের ভেতর জন্ম নেয়। যতোই তাকে ভালো ভালো যুক্তি দেখাতে থাকুক না কেনো রোগী কিন্তু মনে করবে যে সে অতিতে এমন কোন পাপ করেছে যে এখন ঈশ্বর তাকে পুরোপুরি শাস্তি দিয়ে চলেছে। যাকে বলে ‘ডিলিউশন অব গিলট।

এমনো দেখা যায়, এসব রোগী নিজেকে ভাবেন যে সে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে গেছেন আর ভালো হবেন না। তাকে বলা হয় ‘ডিলিউশন অব ইল হেলথ’।

কখনো কখনো রোগীরা ডাক্তারের পরামর্শেও বিশ্বাস করতে চায় না। তারা ভাবে বোধ হয় আর বাঁচবে না- এমনকি কোন কোন অঙ্গ হয়তো নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে বা পড়ে যাচ্ছে এবং তিনি মরে গেছেন। এ অবস্থাকে বলে ‘নেতিবাচক অলীক বিশ্বাস’।

রোগীরা তখন কিছুই ভালো লাগে না। কারো সাথে আলাপ করার আর্কষণ হারিয়ে ফেলে। সে মনে আনন্দ উল্লাস নিয়ে যেসব কাজকর্ম করতো তা এখন শুনলেই মন বিষাদে ভরে উঠে। সে এমনি নৈরাশ্য চিন্তায় মগ্ন থাকে যার জন্য আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা তার মোটেই মনে থাকে না। নিজেও ভাবে যে তার চিন্তা শক্তি সম্পূর্ণ লোপ পেয়ে যাচ্ছে।

এ সময় রোগীরা অনেক অদৃশ্য লোকের কথা শুনতে পারেন। কেউ হয়তো রোগীকে দোষারোপ করছে বা গালিগালাজ করছে। আবার কেউ হয়তো তাকে আত্মহত্যার জন্যও বলছে। এমন অদৃশ্য কথা তার কানে আসে। একে বলা হয় ‘হ্যালুসিনেশন’ বা অলীক প্রত্যক্ষণ। হ্যালুসিনেশনের রোগীরা অনেক সময় আত্মহত্যা করেও ফেলে।  একজন চিকিৎসাবিদ ১০০ জনরোগীর উপর গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন যে, তারা সবাই আত্মহত্যা করতে চায়। এর মধ্যে ৮৮% ডিপ্রেশন রোগে ভুগছে।

এসব ডিপ্রেশন রোগীর শারীরিক উপসর্গও মাঝে মাঝে প্রকাশ পায়। কেউ কেউ মাথায় ভীষণ চাপ বোধ করেন। বলেন তার মাথা ব্যথা করে। শরীর ভীষণ দুর্বল লাগে। খাবারে মোটেই রুচি থাকে না। যার জন্য না খেতে খেতে ওজন কমে যেতে থাকে। ফলে দেহের পানি ও ইলেকট্রোলাইনের ভারসাম্যতা বজায় থাকে না।

আবার কেউ খেতে খেতে  মোটাও হন। তাদের যৌনতাও হ্রাস পেতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা হালো ডিপ্রেশনের রোগী  সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় ভূগে। রোগীর বুক ধড়ফড় করে। হাত পা যেনো হঠ্যাৎ ঠান্ডা হয়ে আসে। মুখ শুকিয়ে যায়। ঘন ঘন প্রসাব করে। পেটে প্রচুর গ্যাস জমে।

এদিকে রোগীর খিটখিটে মেজাজের কারণে কেউ সঙ্গ দিতে চায় না। রোগী আরো  একাবোধ করে। কোন রকম আচার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন না। সামাজিক জীবনও ব্যাহত হতে থাকে। বিভিন্ন দেশের স্বাভাবিক আচার আচরণও বিভিন্ন। তাদের ভাবাবেগও বিভিন্ন। দেখা যায়, কম উন্নত দেশের শ্রমজীবী ও অশিক্ষিত লোকেরো তাদের অনুভূতি কথায় প্রকাশ করতে না পেরে শারীরিক উপসর্গের মাধ্যমে প্রকাশ ঘটায়।

শিশুরা ডিপ্রেশনে ভুগে কিনা এ নিয়েও গবেষণা চলেছে। যদিও কৈশোর ছেলেদের ভাবাবেগের পরিবর্তণ ঘটে থাকে বলে তারা মাঝে মাঝে একটু বিষণ্ণ হতে পারে। কিন্তু তাই বলে তারা ডিপ্রেশনে ভুগে না।

কখনো দেখা যায়,  ৩৮ বছরের নিচে যাদের বয়স তারা নির্ভেজাল বিষণ্ণতায় না ভুগে নিউরোটিক ডিপ্রেশনে ভুগেন। কারণ  এদের উপসর্গ একটু ভিন্ন। তারা সহজে ঘুমান না। বিকেলের দিকে বেশি বিষণ্ণতা অনুভব করেন। দেখা যায়,  তাদের সাইকোথেরাপী জাতীয় চিকিৎসা ভালো হয়।

ঋতুস্রাবের আগে কিংবা সন্তান জন্ম দেয়ার পর বা ঋতুকাল বন্ধ হওয়ার পর অনেকে বিষাদ বোধ করেন। কিন্তু আসরে সে বিষণ্ণতায় বা ডিপ্রেশনে ভুগেন না।

আবার বৃদ্ধ বয়সে অনেক লোক তার চিন্তাশক্তি লোপ পেয়েছে বলে ভাবেন। সে নিজেকে বুদ্ধি বৈকল্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে মনে করেন। একে বলা হয় ‘সিউডো ডিমেনশিয়া’।

কোন কোন রোগী তার পরিবার, ছেলেমেয়ধের ভরণপোষণ করতে পারবে না ভাবেন। যদিও সে বিত্তশালী। দোকান থেকে চুরি করেও ফেলেন।  এমনকি সে ভরণপোষণ করতে পারবেন না। ভয় হয় নিজে আত্মহত্যা করেন নতুবা তার পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলেন। এসব রোগীদের নিয়ে সারা বিশ্বেই চলছে গবেষনা। রোগীদের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে পরখ করা যাচেছ। এমনও দেখা যায়, রোগী ডিপ্রেশনের, কিন্তু কোনই কারণ নেই।

বিজ্ঞানীদের মতামত হলো এসব রোগীদের যদি মস্তিস্ক এড্রেনালিন ও সেরোটিনের পরিমাণ কমে গ্রোথ হরমোন ও করটিসলের সাথে ডিপ্রেশনেরও সম্পর্ক আছে। কারো মতে বংশগত কারনও আছে।

কোন কোন ওষুধ যেমন স্টেরয়েড, রেসারপিন, জন্মনিরোধক বড়ি ইত্যাদি খাওয়ার বা কারো যদি ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে বিষণ্ণতায় ভুগতে পারে।

খুঁত খুঁত স্বভাবের লোকেরা নাকি বিষন্নতায় বেশি ভুগে। যারা আনন্দ উল্লাসে দিন না কাটিয়ে একা একা কিংবা কোন কাজের পুরষ্কার বা স্বীকৃতি পান না তারাও বিষন্নতায় ভুগে। নানারকম সামাজিক কারণেও ডিপ্রেশন হয়। কারো কারো কারো স্বামী নেই বা কারো স্ত্রী নেই। ছেলেমেয়েদের একাই লালনপালন করেন। কিংবা স্বামী স্ত্রীকে ছেড়ে চলে গেছেন তাদের মধ্যে ডিপ্রেশন  হয়।

যারা বেকার জীবন যাপন করছে বহুদিন যাবত তারাও ডিপ্রেশনে ভুগে। কখনো দেখা যায়, মায়েরা তাদের সন্তানকে পাঠিয়ে দেন লেখাপড়ার জন্য বিদেশ কিন্তু সন্তানেরা ফিরো আসে না। পিতামাতারা তখন ডিপ্রেশনে ভুগেন।

আরো নানা কারণে মানুষ ডিপ্রেশনে ভাগে। চিকিৎসককে সর্তকতার সাথে ডিপ্রেশন রোগ নির্ণয় করেই রোগের চিকিৎিসা করা হয়।

এমনো হতো পারে রোগী মানসিক কারণে বিষণ্ণতা হলে তা দূর করার জন্য মানসিক পদ্ধতিই যথেষ্ঠ। সামাজিক কারণে রোগী ডিপ্রেশনে ভুগলে তা অব্যশই মনস্ততঃ মুলক। আবার এনডোজেনাস ডিপ্রেশন এ রোগীকে বড়ি বা বৈদ্যুতিক শকে ভালো করা হয়।

ডিপ্রেশনে কেউ ভুগলেও সাথে সাথে তাকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে ভালো পরামর্শ ও ওষুধ সেবন করতে হবে বহুদিন। গাফিলতি করা ঠিক হবে না। মনে রাখতে হবে যে বিষণ্ণতা বর্তামানে বাংলাদেশেও একটা মারাত্মক রোগ।

 

বিশেষ প্রয়োজনেঃ 

আপনার যে কোন সময় এম্বুলেন্স সার্ভিস দরকার হতে পারে। যে কোন ধরনের এম্বুলেন্স সার্ভিস পেতে হলে খালেদ এম্বুলেন্স সার্ভিস এ যোগাযোগ করুন। অথবা কল করুন এখনই ০১৯৩৩২৪৬৫৭৭ – এই নাম্বারটি মনে রাখুন অথবা আপনার মোবাইল এ সেভ করুন এখনই। kmosarrof@gmail.com

আমাদের এম্বুলেন্স সার্ভিস ভিজিট করুনঃ https://khaledrentacar.com/ambulance-service/