বুড়ো বয়সে মূল্যবান পুষ্টি

  • by

বুড়ো বয়সে মূল্যবান পুষ্টি

ডা. শুভাগত চৌধুরি

বুড়ো হওয়া অনিবার্য।  একে এড়াবার উপায় নেই। কিন্তু বার্ধ্যেক্যের বিধ্বংসী ক্রিয়াকে রোধ করা যায়। বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন। সঠিক পথ্যবিধি দ্বারা ব্যর্ধক্যকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে মানুষ। প্রত্যেকের জীবনেই বার্ধ্যেকের পরিচিত দৃশ্য দেখা যায়ঃ শরীর নুয়ে পড়ে, চুলের রং যায় বদলে, চামড়া ঝুলে পড়ে, হাতে পায়ে গিটে হয় ব্যাথা।

বিজ্ঞানীরা বলেছেন, বার্ধক্যের এই দৃশ্য বদলে দেয়া যায়। বিজ্ঞানীরা অনেক আগেই দেখেছেন, মানুষ যত বুড়ো হয় দেহযন্ত্রের ওজন তত বদলে যেতে থাকে। পরিবর্তন যদিও সামান্য। একজন আশিবছরের বুড়া ভদ্রলোকের মস্তিষ্ক, যকৃত এবং ফুসফুসের ওজন একজন যুবকের তুলনায় সামান্য কমে। তবে থাইমাস নামে একটি যন্ত্র আছে যা শুকিয়ে যায় অনেকখানি।

থাইমাস একটি আশ্চর্য দেহযন্ত্র। পটল ধুসর, চ্যাপ্টা আকৃতির ‍দুই লোববিশিষ্ট এই গ্রন্থিটি বক্ষদেশে বক্ষফলক এবং ফুসফুসের পেছনে অবস্থিত। থাইমাস,  এর হরমোনের মাধ্যমে দেহের শ্বেতকণিকাদের কর্মবৃত্তি ও পুষ্টির সঙ্গে সর্ম্পকিত। এই শ্বেতকণিকারা হল লিষ্ফোসাইট বা লসিকাকণিকা যা দেহ প্রতিরোধী বস্তু।

দেহরক্ষী সেনাদের একট হল টি লিষ্ফোসাইট। এদের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র হল এই থাইমাস। কোন বিদেশী অবাঞ্চিত আগন্তুক যেমন ভাইরাস বা ক্যান্সার কোষের সঙ্গে যখন টি লিষ্ফোসাইটের দেখা হয় তখন এরা উদ্দীপিত হয়ে বিভাজিত হয় আরো বড় সক্রিয় কোষে। আগন্তুকের সঙ্গে যুদ্ধ করে এদেরকে ধ্বংস করে। ইতিমধ্যে টি কোষগুলো দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থার অন্যান্য অংশকেও করে উদ্দীপিত। এদের নাম ম্যাক্রোফেজ কোষ। এছাড়া রয়েছে বি কোষ’। এন্টিবডি তৈরির মাধ্যমে বিদেশী এন্টিজেনকে করে পর্যুদস্ত। দেহ যদি সবল থাকে তাহলে টি কোষ এবং অন্যান্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা দেহ শত্রুদেরকে ‍যুদ্ধে পরাজিত করে অজান্তেই।

বার্ধ্যক্যে থাইমাস যখন শুকিয়ে যায় তখন এর হরমোন নিঃসরণ যায় কমে টি কোষের সংখ্যাও অনেক কমে। বৃদ্ধ টি কোষগুলোর পুনঃজননের ক্ষমতাই শুধু কমে না, ‘বি কোষকে’ এন্টিবডি উৎপাদনের জন্য উদ্দীপিত করার শক্তিও যায় নিঃশেষ হয়ে। বার্ধে্যক্যে সঙ্গে দেহ প্রতিরোধ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণও শিথিল হয়ে পড়ে। বাল্টিমারের জরাবিজ্ঞানী  উইলিয়াম এভলারের বক্তব্য এই।

অনেকের অভিমতঃ বৃদ্ধ লোকদের রোগব্যাধী এবং মৃত্যু, বিশেষতঃ ক্যান্সার ও সংক্রমণজনিত মৃত্যুর জন্য থাইমাসের কার্যকালাপ এবং টি কোষের কার্যকালাপের অধোগতিই দায়ী। আগে একে বার্ধক্য প্রক্রিয়ার অনিবার্য পরিণতি হিসেবেই দেখা হত। নিউফাউল্যান্ডের মেমোরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাঃ রঞ্জিতকুমার চন্দ্রের অভিমত হল,  বুড়ো বয়সে দেহ প্রতিরোধ ব্যবস্থার বৈকল্যের জন্য যে রোগগুলো দেখা যাচেছ, সেগুলো সবই স্বাভাবিক বার্ধক্য প্রক্রিয়ার কারণে নয়, এমন একটি ধারণার সম্ভাবনা উজ্জল: প্রতিবেশগত কিছু কিছু উপাদান যেমন খাদ্য পথ্যেরও কিছু ভূমিকা রয়েছে।

এ ব্যাপারে গবেষণার একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল থাইমাসজাত হরমোন। ভারম্যান্ট স্কুল অফ মেডিসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক উইলিয়াম এসলার টেস্টটিউবের মাধ্যমে মানব লসিকাকোষের উপর থাইমাস হরমোন থাইমোসিনের প্রভাব পরীক্ষা করেছেন। এরপর সরাসরি মানব দেহেও এর প্রভাব দেখেছেন।

দেহ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী রাখতে থাইমোসিন হরমোনের ভূমিকা স্বীকৃত ব্যাপার। তবে একটি মূল্যবান ধাতু প্রয়োগেও  ত্বরিত সুফল পাওয়া সম্ভব। সেই ধাতুর নাম দস্তা। ডাঃ এসলারের অভিমত হল, বেশ কয়েকজন গবেষক দেহ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করার উদ্দেশ্য দস্তা ব্যবহার করে সুফল পেয়েছেন। এর কারণ কি ? থাইমাস গ্রহ্নিটি দস্তা ধাতুতে পরিপূর্ণ। প্রোটিন সংশ্লেষ এবং কোষ বিভাজনের জন্য দস্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিরোধ ব্যবস্থার কার্যকারিতার জন্য এ দুটো বিষয় প্রয়োজনীয়, সন্দেহ নেই।

দস্তার কার্যকারিতা সম্বন্ধে আরো গবেষণা করেছেন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী এবং অনাক্রম্য তত্ববিদ রবার্ট গুড। অপুষ্টির শিকার শিশুদের মধ্যে গবেষণা করতে গিয়ে তিনি লক্ষ্য করলেন তাদের অপুষ্টির সঙ্গে যুক্ত আছে দেহ প্রতিরোধ ব্যবস্থার মারাত্মক অধোগতি। ডাঃ গুড দেখলেন দেহ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার মূলে রয়েছে দস্তার ঘাটতি। আরো অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে দেহ প্রতিরোধ ব্যবস্থার  এই বৈকল্য দস্তা প্রয়োগ করে সংশোধন করা সম্ভব। অপুষ্টির শিকার শিশুদের দেহ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে আরো গবেষণা করেছেন ডাঃ রঞ্জিতকুমার চন্দ্র। দস্তা প্রয়োগ করে মানবদেহে প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করা যায়, এমন পর্যবেক্ষণ করেছেন ডাঃ চন্দ্র। সম্প্রতি দস্তা নিয়ে গবেষণা করেছেন ইটালির একদল গবেষক। শিশুদের এক ধরনের বংশগত রোগ ‘ডাইনস সিনড্রোম’ এর কার্যকারিতা দেখেছেন তারা।

পুষ্টি উপাদানের মধ্যে কেবল দস্তাই যে গবেষকদের দৃষ্টি আর্কষণ করেছে তাই নয়। কিছুসংখ্যাক গবেষক বার্ধ্যক্য পীড়িত অন্যক্রমা ব্যবস্থার উপর ভিটামিন ই এর প্রভাবও পরীক্ষা করে দেখেছেন। বোস্টরেনর মহিলা বিজ্ঞানী সিমিনি মেইডানি বৃদ্ধ ইদুরদের অন্যক্রম্য প্রতিক্রিয়ায় সঙ্গে ভিটামিন ই এর সম্পর্ক সন্ধান করেছেন।

ফলাফল হলঃ ভিটামিন ই প্রয়োগে অন্যক্রম্য (ইম্যুন) ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ডাঃ মেইডানি মনে করেন, প্রাষ্টাগ্লান্ডিন নামক  এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ অবদমনের মাধ্যমে ভিটামিন ই কার্যকরা হয়েছে। দেহ অন্যক্রম্য ব্যবস্থায় (ইম্যুন সিস্টেম) কার্যকারিতা প্রোষ্টাগ্লান্ডিনের উপর কিছু অংশে নির্ভরশীল। অসম্পৃক্ত মেদ অম্ন থেকে প্রোস্টাগ্লান্ডিনের উৎপত্তি। প্রোষ্টাগ্লান্ডিন অন্যক্রম্য ব্যবস্থা ব্যহত করে এবং ভিটামিন ই প্রোষ্টাগ্লান্ডিনকে অবদমন করে। এই হচ্ছে ডাঃ মেইডানির ব্যাখা।

দেহের অনাক্রম্য ব্যবস্থাকে বলশালী করতে ভিটামিন সি র জুড়ি নেই, এ অভিমত বেলজিয়ামের একদল গবেষকের। বিশেষত এটি কার্যকর বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে। গবেষকদের অভিমত হলঃ নিষ্ক্রি, অপরিপক্ব, টি লিষ্ফোসাইটগুলোকে সক্রিয় এবং যোদ্ধা টি কোষে রূপান্তরিত করার জন্যঃ থাইমাস হরমোনের কার্যকলাপকে ভিটামিন ‘সি’ ত্বরান্বিত করে। এভাবে দেহ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। পক্ককেশ বৃদ্ধদের সংখ্যা পৃথিবীতে বাড়ছে, একথা অস্বীকার করা যাবে না। আমাদের দেশেও জনগনের প্রত্যাশিত আয়ু বাড়ছে। সঙ্গতকারনেই বৃদ্ধদের স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে ভাববার সময় এসেছে। যদি বার্ধক্যকে রোগমুক্ত, স্বস্তিকর করার জন্য এখনই একটু ভাবা যায়, তাতে দোষ কি ? পুষ্টি ঘাটতিরে জন্য  যে বৃদ্ধদের দেহ অনাক্রমা ব্যবস্থা দুর্বল হয়েছে, এদের পুষ্টি ঘাটতি তো অন্তত পুরণ করা যায়। এতে তাদের দেহ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে এবং সে সঙ্গে কমবে রোগ ব্যাধি। নিরোধ বাধর্ধক্য এ কামনা আমাদের সবার।

 

বিশেষ প্রয়োজনেঃ 

আপনার যে কোন সময় এম্বুলেন্স সার্ভিস দরকার হতে পারে। যে কোন ধরনের এম্বুলেন্স সার্ভিস পেতে হলে খালেদ এম্বুলেন্স সার্ভিস এ যোগাযোগ করুন। অথবা কল করুন এখনই ০১৯৩৩২৪৬৫৭৭ – এই নাম্বারটি মনে রাখুন অথবা আপনার মোবাইল এ সেভ করুন এখনই। kmosarrof@gmail.com

আমাদের এম্বুলেন্স সার্ভিস ভিজিট করুনঃ https://khaledrentacar.com/ambulance-service/