মহিলাদের ১০ টি ঘাতক রোগ

  • by

মহিলাদের ১০ টি ঘাতক রোগ

ডাঃ ভোরনন ফোরম্যান

এক. হৃদরোগ

অনেক মহিলাই মনে করে থাকেন শুধু পুরুষেরােই হৃদরোগে মারা যান। মহিলাদের এই ধারণা মোটেই সত্য নয়। বরং হৃদরোগে মহিলারাই বেশি মারা যায়।

যদিও পঞ্চান্ন বয়সের বেশি বয়স্ক মহিলারাই সবচেয়ে বেশি মারা যায়। তবে পঞ্চান্ন বয়সের কম বয়স্কা মহিলা সিরোসিস বা অন্যন্য লিভারজনিত রোগে মারা গেলেও হৃদরোগেই সবচেয়ে বেশি মহিলা মারা যায়।

বর্তমানে হৃদরোগের চিকিৎসায় অভূতপূর্র্ব উন্নতি হয়েছে। বেশিরভাগ হাসপাতালেই আজকাল ওপেন হার্ট সার্জারির ব্যবস্থা রয়েছে। তবে হৃদরোগের রোগীদের সুস্থ করার চেয়ে এ রোগ প্রতিহত করা আরও সহজ। আর হৃদরোগের প্রতিরোধ করতে হলে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে।

ক) আপনার ওজনের প্রতি খেয়াল রাখুনঃ

মোটা হওয়ার ফলে প্রতি বছর হাজার হাজার লোক মারা যাচ্ছে। তাই আপনার ওজন যদি দুই স্টোন বেশি হয় তা আপনার জন্য ঝুকিপূর্ণ। খাদ্য বন্ধ করে দেয়া খুব একটা ভালো নয়। এজন্য আপনার খাওয়ার অভ্যাসকে পরিবর্তন করতে হবে। শুধু ক্ষুধার সময় খাওয়ার অভ্যাস করা সবচেয়ে ভালো।

খ) সিগারেট এড়িয়ে চলুনঃ

যদি আপনি নিজেকে মেরে ফেলতে চান তাহলে সিগারেট খাওয়াটা আপনার জন্য একেবারেই বোকামী। সিগারেট আপনার ধমনীকে সঙ্কুচিত করে দেয়। যার ফলে আপনার হৃদ যন্ত্রে চাপ সৃষ্টি হয়।

গ) দুশ্চিন্তা দমনঃ

       অযাচিত চিন্তা জীবন থেকে দুর করুন। আপনার দুশ্চিন্তা কতগুরো অপ্রয়োজণীয় এবং কিভাবে নির্ভাবনারয় থাকা যায় সেই কৌশল আয়ত্ব করতে শিখুন। চিন্তাভাবনা দুর করে মানসিক, প্রশান্তি অর্জনের ব্যাপারে লাইব্রেরিতে অনেক বই ও ভিডিও টেপে অনেক সন্ধান থাকে। সেগুলো দেখুন। একবার সে কৌশল জানা হয়ে গেলে আপনি আপনার জীবনের সমস্যা মোকাবিলা করতে পারবেন।

ঘ) সঙ্গত খাদ্য গ্রহনঃ

চর্বি মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। সম্পূর্ণ বা আংশিক চর্বি উঠানো দুধ খাবেন। মাখনের পরিবর্তে কম তেলযুক্ত স্প্রেড রুটিতে খাবেন। এমন মাংস খাবেন যার মধ্যে কোন চর্বি থাকে না। যদিও বা ছিটোফোটা থাকে তা ফেলে দেবেন। বেশি পরিমাণে লাল রংয়ের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

ঙ) নিয়মিত ব্যায়াম করুনঃ

ব্যায়াম অনুশীলনটা যেন কষ্টদায়ক না হয়। এতে যদি আপনাকে ব্যথা দেয় তা আপনার জন্য আরো ক্ষতিকর করা দরকার।

যেভাবে করলে আপনার ভালো লাগে সেভাবে করুন। কিন্তু নিয়মিত চালু রাখবেন। সবচেয়ে ভালো ব্যায়াম হচ্ছে সাতার কাটা, নাচা, হাঁটা এবং সাইকেল চালানো। ব্যায়ামের জন্য এয়ারোবিক ক্লসগুলোর আপনার জন্য ভালো।

দুই.  স্ট্রোক বা হঠ্যাৎ করে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা রক্ত প্রবাহে বাধা প্রাপ্ত হওয়া

দেহের অন্যান্য অংশের মত মস্তিষ্কও নিয়মিত রক্ত সরবারহ যদি বাধা প্রাপ্ত হয় অথবা কোন শিরা থেকে রক্ত ক্ষরণ হতে থাকে তাহলেই আপনার স্ট্রোক হবে। স্ট্রোকের তীব্রতা মৃদু হলেও আপনার দেহ অবশ হয়ে যেতে পারে বা আপনার কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে যেতে পারে।

দেহের মাংসপেশি বা কোন অংবিশেষের কতটুকু ক্ষতি হয়েছে তা নির্ভর করবে মস্তিস্কের কোন অংশে স্ট্রোক হয়েছে। বড় আকারের স্ট্রোক হলে আপনি মারা যেতে পারেন। ২ ধরনের উল্লেখযোগ্য স্ট্রোক আছে।

রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক

রক্তনালী ছিড়ে গিয়ে এক স্থান রক্ত জমতে থাকলে সে চাপের সৃষ্টি হয় তাতে দেহের ঐ স্থান নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।

রক্ত জমাটজনিত স্ট্রোক

মস্তিস্কের ধমনীর রক্ত জমাট বেধে গেলে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মস্তিষ্কের সেই অংশে রক্ত এবং অক্সিজেন পৌছাতে পারে না। তবে ওঠেন। স্ট্রোক আক্রান্ত হয়ে যেসব রোগী হাটাতে পারতেন না তারাও আবার হাটতে পারেন।

নিম্নলিখিত জিনিসগুলো যদি আপনি করে থাকেন তাহলে আপনার স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

ক) আপনার যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে।

খ) আপনি যদি খুব চর্বিযুক্ত খাদ্য খেয়ে থাকেন।

গ) আপনার যদি বহুমুত্র রোগ থাকে এবং তার কোন চিকিৎসা করানো হয়নি।

তাই আপনার স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা যদি কমাতে চান আর যদি আপনার বয়স ষাটের বেশি হয় তাহলে বছরে একবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে রক্তের চাপ এবং প্রস্রাব পরীক্ষা করাবেন।

আর আপনার পরিবারের কারো যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে তাহলে আপনি বেশি লবণযুক্ত খাদ্য একেবারেই পরিহার করবেন এবং আলাদা লবণ গ্রহণ করবেন না।

আর পরিহার করতে চেষ্টা করবেন চর্বিযুক্ত খাদ্য। ধুমপান করবেন না।

       তিন. নিউমোনিয়া

যেসব রোগে মহিলাদের সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটে নিউমোনিয়া তাদের মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এই রোগে পুরুষের চেয়ে মেয়েরাই অনেক বেশি মারা যায়। সাধারণত বুড়ো ও জোয়ানরাই এই অসুখের শিকার। যে সমস্ত মহিলা সহজেই রোগ জীবানুর শিকার হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে বিশেষ করে মদ্যপায়ীরা, তারা সহজেই এই রোগে আাক্রান্ত হয়।

নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হলে ফুসফুস ফুলে যায়। ভাইরাস বা নানা ধরনের রোগজীবানুর কারণে এই রোগ হয়। এর প্রথম লক্ষণ হচ্ছে তীব্র জ্বর হওয়া, ঘন ঘন নিঃশ্বাস প্রশ্বাস টানা, কাপুনি ও ঘাম হওয়া এবং কাশির সাথে সাথে ঘন জমাট রক্তের কাশি বের হওয়া। পেনিসিলিন এবং আরো কয়েক ধরনের এন্টিবায়োটিক দিয়ে এই রোগ সারানো হয়। আবার অনেক সময় তাতেও রোগ নিরাময় হয় না।

নিউমোনিয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে নিচে উল্লেখিত সাবধনতাগুলো অবলম্বন করতে হবেঃ

  • প্রচুর পরিমাণে ফল ও সবজি জাতীয় পুস্টিকর খাদ্য খাবেন।
  • ফুসফুসকে সুস্থ রাখার জন্য ধোয়া এবং ধুলাপুর্ন বাতাস যাতে নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করতে না হয় সে দিকে খেয়াল রাখবেন।
  • ধুমপায়ীদের কাছ থেকে দূরে থাকবেন।
  • নিজেকে সব সময় স্বাস্থ্যবান রাখার চেষ্টা করবেন বিশেষ করে মদ্যপান করে স্বাস্থ্যের অবনতি ডেকে আনবেন না।

চার. ব্রেষ্ট ক্যান্সার

ব্রেষ্ট ক্যান্সার সাধারণতঃ বেশির ভাগ মহিলাদের হয়ে থাকে। তাই এ ব্যাপারে নীচে উল্লেখিত তথ্যগুলো মহিলাদের জানা প্রয়োজনঃ

মহিলাদের বয়স যখন বিশের নিম্নে এবং গর্ভাবস্থায় বা স্তন্যপানকালে তাদের ব্রেষ্ট ক্যান্সার সাধারণত হয় না। ত্রিশ থেকে ষাট বছর বয়সী মহিলাদের (ব্রেষ্ট ক্যান্সার হওয়ার সময়) প্রতি বিশজন মহিলার মধ্যে একজনের সাধারণত ব্রেষ্ট ক্যান্সার হয়।

যত তাড়াতাড়ি ব্রেষ্ট ক্যান্সার সনাক্ত করা যাবে তত তাড়াতাড়ি এর উপশম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

বছরে একবার চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করান খুব ভালো। তবে দেখানোর এক সপ্তাহ পরে যদি ব্রেষ্ট কোন লাম্প বা পিন্ড গঠিত হওয়া শুরু হয় তাহলে তখন  থেকে ৫১ সপ্তাহ পরে ঐ পিন্ড নজরে আসবে এবং তখনই চিকিৎসা শুরু করা দরকার।

  • কোন প্রকার বিলম্ব ঘটলে মারাত্মক হতে পারে।
  • আজকাল চিকিৎসকদের ধারণা যে আপনি যদি নিজে আপনার ব্রেষ্ট পরীক্ষা করতে পারেন সেটা সবচেয়ে ভালো।

মাসে একবার আপানার পরীক্ষা করা উচিত। মাসিক স্রাব বন্ধ হওয়ার ঠিক পরপরই এটা করা ভালো। কেননা এই সময় ব্রেষ্ট সবচেয়ে বেশি নরম থাকে। কোনটা পিন্ড আর কোনটা পিন্ড নয় সেটা বুঝতে যদি আপনার অসুবিধা থাকে তাহলে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

এই ভাবে করার নিয়মঃ

ক) প্রথমে পোশাকটা খুলে একটা আয়নার সামনে বসুন বা দাড়িয়ে থাকুন আপনার দু পাশে হাত ঝুলিয়ে দিন আয়নার দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখুন, আপনার ব্রেষ্ট্রর আকারে কোন পরিবর্তণ এসেছে কি না। তারপর পরীক্ষা করে দেখুন আপনার ব্রেষ্টের নিপলে কোন রক্ত বা পানি ঝরে কিনা।

খ) তারপর শুয়ে পড়ুন।

গ) আপনার বাম হাতটা মাথার নীচে রাখুন এবং ডান হাত দিয়ে আপনার বাম দিকের ব্রেষ্ট পরীক্ষা করবেন। এজন্য হাতের তালু ব্যবহার করবেন আঙ্গুল দিয়ে নয়। ব্রেষ্টের নীচের এক পাশ দিয়ে হাতের তালু উপরে নিপলের দিকে নিয়ে যাবেন কিছু পিন্ড আছে কিনা তা অনুভব করার জন্য।

ঘ) মনে করবেন ব্রেষ্টের উপরিভাগে নরম জাতের এক ধরনের পিন্ডের মত থাকে যেগুলো চর্বি এবং দুধ তৈরির গ্রান্ড। উভয় পার্শ্বর ব্রেষ্ট মোটামুটি এক ধরনের হয়।

আপনার খুজতে হবে কোন প্রকার খন্ড বা পিন্ডের অস্তিত্ব বোঝা যাচ্ছে কি না।

ব্রেষ্টের অন্য পাশটাও একইভাবে পরীক্ষা করুন।

ঙ) বগলের তলায় কোন পিন্ড আছে কিনা তাও পরীক্ষা করে দেখেন।

চ) এরপর বাম হাত দিয়ে অনুরূপভাবে অন্য দিকের ব্রেষ্টটাও পরীক্ষা করে নিন।

ছ) যদি কোন পিন্ড নজরে আসে তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই তা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাবেন।

জ) পিন্ড টাকে নিয়ে ঘাটাঘাটি করবেন না।

পাঁচ. ফুসফুসে ক্যান্সার

       ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার প্রধান কারণ। জীবনের যত তাড়াতাড়ি আপনি ধুমপান করা শুরু করবেন তত তাড়াতাড়ি আপনার ফুসফুস ক্যান্সার হওয়ার আশংকা বেশি থাকবে।

আর যতই আপনার ধুমপানের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে ততই বৃদ্ধি পাবে ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার আশংকাও বাড়বে।

আপনি যদি ধুমপায়ীদের সাথে থাকেন বা কাজ করেন সেই ধোঁয়ার শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে গিয়েও আপনার ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে পারে। ধুমপায়ীদের অবশ্য এ ব্যাপরে বলে থাকেন তাতে আর কি হবে ? আমাদের সবাইকে একদিন তো চলে যেতেই হবে। কিন্তু মরতে হবে। হয়তো বা চল্লিশের পর আপনার জীবনা শেষ হয়ে যাবে।

আর মৃত্যুটাও বড় যন্ত্রণাদায়ক

       এই অসুখের প্রথম লক্ষণগুলো হলো যে আপানার কাশি যেন মোটেই সারাতে চাইবে না। তারপর শুরু হবে কাশিতে রক্ত আসা, বুকে ব্যথা, হাই হাই শব্দ বুকের ভিতর এবং অতি ঘন ঘন শ্বাস প্রশ্বাস গ্রহণ।

ফুসফুসের ক্যান্সার দেহের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। যেমন হাড্ডি, লিভার এবং মস্তিষ্কে। তখন শুরু হয় ব্যথা এই সমস্ত স্থানেও।

অস্ত্রোপাচার, ওষুধ ও রেডিওথেরাপী দিয়েও এই রোগের চিকিৎসা করা হয়। শতকরা ১০ ভাগেরও কম রোগী ৫ বছর বেচে থাকতে পারে। তাড়াতাড়ি চিকিৎসা পেলে অনেক অসুবিধা হয় (লক্ষণগুলো সম্বন্ধে চিকিৎসকর কাছে তাড়াতাড়ি জানানো দরকার)

ছয়. কোলোন বা মলাশয় ক্যান্সার

বড় অস্ত্রের সবচেয়ে বড় অংশকে মলাশয় বলা হয় এবং মলাশয়ে ক্যান্সার পশ্চিমাদের মধ্যে খুব বেশি হওয়া শুরু করেছে। অধিকাংশ চিকিৎসকের মতে আমাদের খাওয়ার উপরই এই অসুখ বেশি ভাগ নির্ভর করছে।

  • অতিমাত্রায় খাওয়া।
  • বেশি চর্বি খাওয়া।
  • কম আশ বহুল খাদ্য গ্রহণ

মলাশয়ে ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে নীচে উল্লেখিত নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে।

  • কম মাংস খাবেন বিশেষ করে লাল মাংস
  • কম চর্বিযুক্ত খাদ্য খাবেন।
  • আশবহুল খাদ্য বেশি করে খাবেন (ছিলকাসহ আলু খাবেন, বেশিক্ষণ ধরে সিদ্ধ করে সবজি খাবেন না, টাটকা ফল খাবেন, গমের আটা তৈরি রুটি এবং ব্রাউন চাল ও ওট মীল ও বেকডবীন খাবেন)

মলত্যাগের দৈনন্দিন ধারার কোন পরিবর্তণ দেখা দিলে  মলাশয়ে ক্যান্সার হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে অনেক সময় ধরা যেতে পারে (হঠ্যাৎ হঠ্যাৎ ডায়রিয়া আবার পরবর্তীতে কোষ্ট্যকাঠিন্য দেখা দেয়া)। সপ্তাহব্যাপী এই রকম চলতে পারে।

সাত. ব্রনকাইটিস

ফুসফুসের ক্যান্সারের মত ব্রনকাইটিসের প্রধান কারণ সিগারেট খাওয়া। হয় আপনি নিজে অথবা আপনার আশপাশে অন্য কেউ সিগারেট খাওয়ার জন্যও ব্রনকাইটিস হতে পারে। সিগারেটের ধোয়ায় ফুসফুসর মাধ্যে বাতাস চলাচল করার যে ফুটা থাকে সেগুলো সরু হয়ে যায়  এবং বিজল তরণ পদার্থও বেশি পরিমাণে নির্গত হয়।

এতে রোগ দেখা দিতে থাকে ততই অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তাই ব্রনকাইটিস হলেই প্রায়ই অফিস কামাই দিতে হয়ে।

দুঃখের বিষয় যে লক্ষ লক্ষ মহিলা ব্রনকাইটিসে ভোগেন। আর তাদের বেশিরভাগই চল্লিশের উর্দ্ধে।

সবচেয়ে দুরবস্থা শহরগুলোতে যেখানে দুষিত বায়ু শ্বাস প্রশ্বাসের মধ্যে গিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করে।

সব সময় কাশ, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হওয়া এবং বুকের ব্যথা হওয়া এই রোগের লক্ষণ।

এ্যান্টিবায়োটিকস দিয়েও চিকিৎসকগণ এই অসুখের চিকিৎসা করে থাকেন অথবা এমন ওষুধও ব্যবহার করে থঅকেন যা দিলে ফুসফুসে বাতাস যাতায়াতের পথগুলো বিস্তার কের দেয় যাতে অক্সিজেন প্রবেশ করতে পারে। ব্রনকাইটিসের রোগীরা  তাদের কষ্ট নিয়ে বহুদিন বেচে থাকেন। তাদের নিঃশ্বাস প্রশ্বাস খুব ঘন ঘন নিতে হয় এবং যেখানে সেখানে যেতে পারেন না। ব্রনকাইটিস থেকে বাচার সবচেয়ে উত্তম পন্থা হচেছ সিগারেট না খাওয়া।

আট. পেটের ক্যান্সার

আগে  এই ক্যান্সার অনেক পরিমাণে দেখা যেতো। এখনও দশটি গুরত্বপূর্ণ রোগের মধ্যে  একটি। দিন দিন এই ক্যান্সার কমে যাওয়ায় সঠিক কারণ সম্বন্ধে কেউ কিছু বলতে পারে না। তবে খাওয়া দাওয়ার কারণেও হতে পারে। কোন কোন চিকিৎসক বলে থাকেন যে অধিক লবণ দিয়ে তৈরি খাদ্য, আচার এবং স্কোকড খাধ্য ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

লক্ষণগুলো সাধারণত নিম্নরূপঃ

  • ক্ষুদা নষ্ট
  • ব্যাথা
  • অর্ধেক খাওয়ার পরেই মনে হবে পেট ভরে গেছে।
  • বমি বমি ভাব ও বমি
  • ওজন কমা

অস্ত্রোপাচার করে চিকিৎসা করাটাই ভালো। তাতে কিছু ফল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে সব রোগীকে অস্ত্রোপাচার করা যায় না, বিশেষ করে যদি ক্যান্সার অন্যত্রও ছড়িয়ে গিয়ে থাকে।

তাড়াতাড়ি চিকিৎসা হওয়াটা অত্যন্ত প্রয়োজন।

উপরিউক্ত লক্ষণসমুহ দেখা দিলে সরাসরি চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

নয়. জরায়ুতে ক্যান্সার

সারজিক্যাল ক্যান্সার থেকে জরায়ুতে ক্যান্সার হয়ে মহিলা বেশি মারা যান। যে কোন বয়সী মহিলার জরায়ুতে ক্যান্সার হতে পারে। তবে চল্লিশ উর্দ্ধ মহিলাদেরই সাধারণত হয়ে থাকে। যে সমস্ত মহিলাদের সাধারণত হয়ে থাকে। যে সমস্ত মহিলাদের সন্তান হয়নি তাদের জরায়ুতে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ৩  গুন বেশি। কিন্তু যে সমস্ত মহিলা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেয়ে থাকেন তাদের জরায়ুতে ক্যান্সার কম হয়।

জরায়ুতে ক্যান্সার হওয়ার আগে অনেক সময় ডিম্বকোষে ক্যান্সার হয়। আবার অনেক সময় অন্য  এক স্থানে  ক্যান্সার হওয়ার কারণে যেমন ব্রেস্টে ক্যান্সার হওয়ার জন্য দ্বিতীয় দফায় জরায়ুতে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে।

প্রথম লক্ষণে পেটে অবছা আবছা ব্যথা বোধ করবেন এবং পেটেও ফুলে উঠতে পারে। অনেক সময় বমি বমি ভাব থাকে এবং বমিও হয়। আর একটা লক্ষণ হচ্ছে যোনী নালীতে রক্তপাত।

ল্যাপরোসকপি করে। সুক্ষ একটা টিউবের মধ্যদিয়ে পেটের ভিতর দেখা অথবা ল্যাপরেটমী করে (পেটের চামড়া কেটে ভিতরে দেখা)। অস্ত্রপাচার করে সাধারণতঃ রোগ নির্ণয় করে থাকেন।

এবার চিহ্নিতকরণ হয়ে গেলে অস্ত্রোপাচার এর মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। এক্ষেত্রে সাধারণত জরায়ু ও ডিম্বকোষ দুটোই ফেলে দেয়া হয়। এরপর রেডিওথেরাপি নেয়া হয় এবং সেই সাথে চলে ক্যান্সার নিরোধক ওষুধ। ইতিমধ্যে অন্যান্য স্থানে কতখানি ছড়িয়ে পড়েছে তার উপর নির্ভর করবে রোগীর সুস্থতা।

দশ. বহুমুত্র

পৃথিবীতে ২ শত কোটি বহুমুত্র রোগী আছে এবং  এই রোগ দিন দিন দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে।

প্রতি ৫০ জন মহিলার মধ্য একজনের বহুমুত্র রোগ আছে। সব রোগীর একই সমস্যা। তাদের রক্তে থাকে চিনির আধিক্য।

সাধারণত আমরা যে খাদ্য গ্রহণ করি তা চুর্ণবিচুর্ণ হয়। অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের সাথে চিনি তৈরি করা কারবোহাইড্রেটের কাজ। চিনি আমাদেরকে শক্তি যোগায়। রুটি, আলু, কেক, বিস্কুট, জ্যাম, পাস্তা, চকলেট এবং ফলের মধ্যে প্রচুর কার্বোহাইড্রেট থাকে। এই মুহুর্তে যদি চিনি উদ্বৃত থাকে তা লিভারে গিয়ে ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য জমা থাকে এবং শরীরে যে চিনির প্রয়োজন পড়ে তা রক্তে চলে যায়। প্যাংক্রিয়াস গ্ল্যান্ড দ্বারা তৈরি ইনসুলিন নামক এক হরমোন চিনির রক্তে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।

যাদের বহুমুত্র রোগ হয় তাদের শরীরে প্রয়োজনমতো ইনসুলিন হয় না।

প্রধানতঃ দু ধরনের বহুমুত্র রোগ আছে

এক ধরনের বহুমুত্র আছে যে খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে অথবা ইনসুলিন বৃদ্ধিকারক ট্যাবলেট খেয়ে বা ইঞ্জেকশন দিয়ে বহুমুত্র রোগকে আয়ত্তে রাখা যায়। যাদের বহুমুত্র রোগের তীব্রতা বেশি তাদের ইনসুলিন ইঞ্জেশন নেয়া নেয়া উচিত।

বহুমুত্র রোগের লক্ষণসমূহ সব সময় এক থাকে  না। বহুমুত্র রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে

  • ওজন কমে যাওয়া
  • তৃষ্ণার্ত হওয়া
  • ক্লান্ত হয়ে পড়া।
  • ঘন ঘন প্রসাব পাওয়া
  • অনেক ফোড়া হওয়া বা
  • সব সময় ক্ষুদা লাগা

বহুমুত্র এমন একটা ব্যাধি যা বংশ পরপম্বর চলে। তাই পরিবারের কোন লোক বিশেষ করে আপনজনের যদি বহুমুত্র থাকে তাহলে আপনারও বহুমুত্র রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

সাধারণতভাবে শুধু প্রসাব পরীক্ষা করেই চিকিৎসকগণ বলে দিতে পারেন কারো বহুমুত্র রোগ আছে কিনা। পরে রক্ত পরীক্ষা করালেও চলে। একবার প্রমাণ যদি হয় যে আপনার বহুমুত্র হয়েছ আপনার নিজের পরীক্ষা নিজেই করতে পারবেন এরপর থেকে। বহুমুত্র নিয়ন্ত্রণ না করলেও যে সমস্য দেখা দিতে পারে এক কথায় নিম্নে তা বর্ণিত হলোঃ

  • চোখ নষ্ট
  • কিডনি নষ্ট
  • স্নায়ু নষ্ট
  • রক্ত চলাচল অসুবিধা
  • উচ্চ রক্তচাপ
  • হৃদপিন্ডে সমস্যা

বর্তমানে পরীক্ষা করার জন্য নানা রকম আধুনিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কার হয়েছে (য বাসাতে বসেই পাওয়া যায়)। তাই বহুমুত্র রোগীরা আগের চেয়ে বর্তমানে অনেক বেশি তাদের অসুখকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

বহুমুত্র রোগীরা যদি তাদের রক্তের চিনির মাত্রাকে সাবধানতার সাথে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তাহলে তারাও এক স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নির্বাহ করতে পারেন।

অনুবাদঃ নাজমা রহমান

 

বিশেষ প্রয়োজনেঃ 

আপনার যে কোন সময় এম্বুলেন্স সার্ভিস দরকার হতে পারে। যে কোন ধরনের এম্বুলেন্স সার্ভিস পেতে হলে খালেদ এম্বুলেন্স সার্ভিস এ যোগাযোগ করুন। অথবা কল করুন এখনই ০১৯৩৩২৪৬৫৭৭ – এই নাম্বারটি মনে রাখুন অথবা আপনার মোবাইল এ সেভ করুন এখনই। ইমেইলঃ kmosarrof@gmail.com

আমাদের এম্বুলেন্স সার্ভিস ভিজিট করুনঃ https://khaledrentacar.com/ambulance-service/