লালবাগ কেল্লা

  • by

lalbag kella or lalbag Fort or লালবাগ কেল্লা 

তিন শতকের পুরান ঐতিহাসিক স্থান লালবাগ কেল্লা, যাকে দুর্গও বলা হয়। মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র শাহজাদা আজম ১৬৭৮ খ্রিস্টাব্দে এই কেল্লা নির্মাণ শুরু করেন। তবে বছর না ঘুরতেই তাঁকে রাজধানি দিল্লীতে তলব করায় কেল্লার কাজ অসমাপ্ত থেকে যায়। এরপর সুবাদার হিসেবে সায়েস্তা খান এখানে এসে পুনরায় কেল্লার নির্মাণ কাজে হাত দেন। তবে পরবর্তীতে দাক্ষিনাত্তের যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে মোঘল সম্রাটগণ সাম্রাজ্যের অনেক উন্নয়ন মুলক কাজই বন্ধ করে দিলে এই কেল্লার নির্মাণ কাজও অসামাপ্ত থেকে যায় বলে অনেক ইতিহাসবিদ উল্লেখ করেছেন। তবুও এ কেল্লা ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে।

কেল্লার ভিতরে তিনটি পুরাকীর্তি আছে। একটি হল পরী বিবির মাজার, একটি দরবার হল ও হাম্মাম এবং তৃতীয়টি হল তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ। এ কেল্লার চারটি ফটকের মধ্যে প্রধান ফটক, যেটি একশ টাকার নোটে মুদ্রিত, সেটি এখন বন্ধ। তার বিপরীত দিকের চারটি ফটকের মাঝখানের ইট এখন প্রধান ফটক হিসেবে স্বীকৃত। এ ফটকটিই দর্শনার্থীদের জন্য ব্যবহৃত হয়।

দশ টাকা দিয়ে একটি টিকেট কিনে ভিতরে ঢুকে পড়লে প্রথমেই চোখে পরবে বহুল আলোচিত পরীবিবির মাজার। কত্রিপক্ষের মতে এ মাজারটি বাংলাদেশের সবচেয়ে মূল্যবান পুরাকীর্তি। মাজারের অন্যতম বৈশিষ্ট হল, এটি তৎকালীন খ্যাতনামা হিন্দু ও মুসলমান আর্কিটেক্টদের যৌথ প্রচেষ্টায় নির্মাণ করা হয়েছে সুনিপুণ শিল্পকৌশল ব্যাবহার করে। দিল্লীর হুমায়ূনের মাজার অনুকরনে নির্মাণ করা হয়েছিল ঐতিহাসিক আগ্রার তাজমহল। আর আগ্রার তাজমহলের পরিকল্পনার অনুকরনে নির্মাণ করা হয় পরীবিবির মাজার। শুধু তফাতটা হল তাজমহল দ্বিতল ভবনের আর এটি একতলা ভবন। কিন্তু এর অভ্যন্তরভাগ তাজমহলের অনেকটা অনুরূপই।

তাজমহলের অভ্যন্তরে যে নয়টি কক্ষ রয়েছে বিবি পরীর মাজারেও অনুরূপ নয়টি কক্ষ। মূল্যবান মার্বেল পাথর, কষ্টিপাথর, বিভিন্ন রঙ এর ফুল ও পাতা সুশোভিত চাকচিক্যময় টালির সাহায্যে অভ্যন্তরীণ এ নয়টি কক্ষ সাজান রয়েছে। কক্ষ গুলোর ছাদও কষ্টি পাথরের তৈরি। মুল সমাধি সৌধের কেন্দ্রীয় কক্ষের উপরের গম্বুজটি নির্মাণ করা হয়েছে বড় বড় তামার পাতের আচ্ছাদনে। এটি নির্মিত হয়েছে ১৬৮৮ খ্রিস্টাব্দের আগে।

পরী বিবির মাজারের পশ্চিম পাশে সুরম্যা মসজিদ এবং পূর্ব পাশে দ্বিতল বিশিষ্ট দরবার হল ও হাম্মাম (গোসল খানা)। আর মাজার থেকে সোজা দক্ষিণে গেলে উঁচু বেদির উপরে উঠলে চোখে পড়বে একটি সুরঙ্গ পথ। এটি কেল্লার সীমানা প্রাচীর এর কোল ঘেঁষে। প্রাচীরটি বেশ উঁচু এবং বেশ শক্ত।

একসময় বুড়ী গঙ্গার পানি এ প্রাচীরে এসে ধাক্কা খেত। উপরের যে সুড়ঙ্গটি সেটি দিয়ে নিচে নামলে একটি কক্ষ দেখা যাবে। এ ছোট কক্ষটিতে সৈন্যরা বসে থাকত। প্রাচীরের গায়ের গোপন ছিদ্র দিয়ে তারা দেখত জল পথে শত্রুবাহিনী এ এলাকা দখল করার জন্য আসছে কিনা। এ কক্ষটি এমন ভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যে, বাহির হতে সত্রুপক্ষের এর অবস্থান ধারনা করার কন উপায় নেই। আবার পূর্ব দিকে কেলার প্রধান ফটকের কাছাকাছি যে সুড়ঙ্গটি রয়েছে সেটি হল মুলত পালিয়ে যাওয়ার মুল পথ।

দ্বিতল বিশিষ্ট দরবার হল ও হাম্মাম মোঘল সাম্রাজ্যের সুনিপুণ শিল্পকলার সার্থক নিদর্শন। ১৭শ শতাব্দীর শেষের দিকে এটি সুবেদার বাসভবন হিসেবে নির্মিত হয়। সরকার এটিকে জাদুঘর হিসেবে রুপান্তরিত করেছে। এর মধ্যে সংরক্ষন করা হয়েছে ঐতিহাসিক তাৎপর্যমণ্ডিত জিনিসপত্র।

নিচ তলার একাংশ হল হাম্মাম বা গোসলখানা। নিচতলার অন্য অংশে রয়েছে ১৮ থেকে ১৯ শতকের শেষের দিকে মোঘলদের ব্যাবহৃত ছরা ও খাপ, বর্শা, বর্শামুল, বল্লম, ফলক, বর্শা নিরোধক লোহার জালের গাত্রবর্ম, গুপ্তি, তরবারি ঢাল, দস্তানা, চিনা পাত্র, সৈন্যদের পোশাকের নমুনা, হাত কুঠার, বক্ষ বর্ম, শিরস্ত্রাণ, তীর ও ধনুক, পারকাশন লক পিস্তল, বন্দুক ও রাইফেল, ফ্লিন্ট লক, হাত কামান, কামানের গুলি তৈরির ছাঁচ ইত্যাদি। আবার দ্বিতীয় তলায় সাজন রয়েছে বিভিন্ন্য সম্রাটদের শাসনামলে ব্যবহৃত মুদ্রা, পারস্যের তৈরি বাসনপাত্র, সিলেডন পেট, হাতে লেখা কোরআন শরিফ, সম্রাটদের পরওয়ানা, কারপেট এবং মোঘল চিত্রকলা অনন্য নিদর্শন আওরঙ্গজেবের কন্যা দুরদানা, শাহজাদা আজম শাহ্‌, আওরঙ্গজেব ও আসফ শাহ্‌ বাহাদুরের প্রতিকৃতি। কেল্লার অন্যতম পুরাকীর্তি মোঘল আমলের মসজিদটি এখন সর্বসাধারণের নামাজ পরার জন্য উম্মুক্ত।

লালবাগ কেল্লার সময় সূচিঃ

এ লালবাগ কেল্লা বা দুর্গ জাদুঘরটি খোলা থাকে সপ্তাহের ৬ দিন। প্রত্যেকদিন সকাল দশটা থেকে একটা এবং এক ঘন্টা বিরতির পর বেলা দুটা থেকে ছ’টা পর্যন্ত এটি দর্শনার্থী দের জন্য উম্মুক্ত থাকে। শনিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। সরকারীর ছুটির দিনগুলোতেও জাদুঘর বন্ধ থাকে।

লালবাগ কেল্লা টিকেট মূল্যঃ

জাদুঘরে জনপ্রতি প্রবেশ মূল্য প্রাপ্ত বয়স্ক বিশ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক দশ টাকা।

খালেদ রেন্ট এ কার থেকে গাড়ি ভাড়া করুন আর ঘুরে আসুন আমাদের ঢাকার বিখ্যাত লালবাগ কেল্লা।