সুন্দরবনের দুঃসাহসী মৌয়াল | Sundarban

  • by

সুন্দরবনের দুঃসাহসী মৌয়াল (Sundarban)

বিশ্বখ্যাত সুন্দরবন (Sundarban) শুধু যে ‍নিসর্গ শোভায় অপরূপ তা নয়, জীবন ও জীবিকারও এক প্রতিশ্রুত হাতছানি, উপকুলীয় কয়েক লাখ মানুষের রুটি রুজির ভরসা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে তো বটেই, মানুষের জীবনসংগ্রামেরও বৈচিত্র্যময় উৎস এই সুন্দরবন। হিংস্র জানোয়ার, ভয়ঙ্কর বনদস্যু এবং হিংস্র সরীসৃপের সঙ্গে নিরন্তর মোকাবেলা করে, নোনা পানি ও নানা পলিবালিতে  হাবুডুবু খেয়ে, ঝড় বান বাতাস ঠেলে, সাহস আর সংগ্রামের উজ্জ্বল উদাহারণ হয়ে বেচে আছে সুন্দরবনে জীবিকার সন্ধানে যাওয়া এসব মানুষ। সেই লড়াকু মানুষদের অন্যতম সুন্দরবনের মৌয়ালদের নিয়ে লিখেছেন শ্রভ্র শচীন

প্রাকৃতিক দুর্যোগ,  সাপের ভয়,  বাঘের অগ্রাহ্য করে শতসহস্য মানুষ প্রতিদিন সুন্দরবনে আসে বেচে থাকার তাগিদে। এরা কেউ কাঠুরে, কেউ জেলে, কেউবা বাওয়ালি কিংবা মৌয়াল। কাঠুরে আর জেলে সারা বছরই বনে আসা যাওয়া করে, কিন্তু বাওয়ালি আর মৌয়ালরা আসে ‍ঋতুবিশেষে। বাওয়ালিরা আসে শীত বসন্তে,  গোলপাতা সংগ্রহের সময়। আর মৌয়ালরা বসন্ত গ্রীষ্মে, অর্থ্যাৎ মধুমাসে, যখন সুন্দরবন মৌমাছির গুঞ্জনে, ফুল ও মধুর সৌরভে ম ম করে।

প্রতি বছর মার্চ মাসে হিমালয় থেকে ডাস মৌমাছিরা ( এপিস ডরমাটা) ঝাকে ঝাকে সুন্দরবেন আসে। সুন্দরবনের বৈচিত্রপূর্ণ ‍বৃক্ষরাজি তখন ফুলে ফুলে সেজে থাকে। বনে খালসী, হরগোজা ইত্যাদি গাছের ফুলে তখন প্রচুর মধু। মৌমাছিরা সেইসব ফুল থেকে মধু আহরণ করে। এপ্রিলে মে মাসে মৌয়ালরা সেই মধু ও মোম আহরণে বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে বনে যান।

মৌয়াল শব্দটি  এসেছে মৌ + আল = মৌয়াল থেকে। স্থানীয় ভাষায় বলে মৌলে। সুন্দরবনে যাত্রার আগে তাবিজ, ঝাড়ফুক এবং পীরের দোয়াও নিয়ে থাকে তারা। নৌকা ভাসানোর আগে দেয়া হয় মিলাদ। প্রথা অনুযায়ী নৌকা বনের উদ্দেশে একবার ভাসালে আর পেছনে তাকানো যাবে না। সেটা অমঙ্গল বয়ে আনে। যাত্রাপথে বনবিবির থানে হিন্দুরা পূজা দেয়, মুসলমানরা শ্রদ্ধা জানিয়ে বাতাস, নারিকেল, মুরগি ইত্যাদি মানত দেয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সুন্দরবনে মধু আহরণ বিপদসঙ্কুল এবং কঠোর পরিশ্রমের কাজ। বিয়োগান্ত ঘটনাও ঘটে প্রায়ই । ফি বছর মধুমাসে গড়ে ৩০-৪০ জন মৌয়াল বাঘের পেটে যায়। তা স্বত্তেও মৌয়ালরা প্রতি বছরই বনে আসে মধু আহরণে।

সাধারণভাবে মনে হয়, শুধু দারিদ্রোর কারণেই তারা মৃত্যুভয় ‍উপেক্ষা করে এই নিদারুণ ঝুকি গ্রহণ করে। কিন্তু মৌয়ালদের পর্যবেক্ষণ করেছেন এমন সুত্রে জানা যায়, দারিদ্র তাদের এই ঝুকিপূর্ণ পেশায় উদ্বুদ্ধ করে এটা যেমন সত্যি, তেমনি মৌয়ালরা যেহেতু বংশানুক্রমিকভাবে  এই পেশায় সম্পৃক্ত, তাই মধুমাস এলেই তাদের রক্তেরও বান ডাকে- সুন্দরবন, মধু ওদের নাড়ি ধরে টানে। আর তখনই ঘর গোরস্থালি ফেলে দল বেধে তারা ছোটে সুন্দরবনে।

সুন্দরবনের নরঘাতক বাঘর হাত থেকে রক্ষা পেতে মৌয়ালরা তাবিজ কবচ, ওঝা, গুণীনের অতিপ্রাকৃত ক্ষমতায় ভরসা করে। বনবিধি, দক্ষিণ রায় এবং বড় খাঁ গাজীর উদ্দেশ্য পূজা দেয়। মানত করে এই বিশ্বাসে যে, ওইসব পীর ও দেবতা ভক্তি পেয়ে সুন্দরবনের বাঘের মতো ভয়ঙ্কর শত্রুর ধ্বংসলীলার বিরুদ্ধে তাদের রক্ষা করতে সক্ষম হবেন। এসব সত্বেও যখন কোনো হতভাগ্য বাঘের কবলে পড়ে তখন মৌয়ালরা ভাগ্যকেই দায়ী করে থাকে এবং আরো বেশি পূজা অর্চনা, মিলাদ মানত প্রভৃতিকে আশ্রয় করে মনের শক্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে। তবে বাঘের সঙ্গে লড়াইয়ে তারা পিছু হটে না।

মৌয়ালদের অতীত

অতীতে সুন্দরবনের আয়তন অনেক বেশি ছিল বলে জানা যায়। ৯৮ বছর আগে ১৯১৪ সালে সতীশ চন্দ্র মিত্রের যশোর খুলনার ইতিহাস গ্রন্থে সুন্দরবনের আয়তন দেখানো হয় পশ্চিমে ভাগীরথী নদীর মোহনা থেকে মেঘনা নদীর মোহনা পর্যন্ত এলাকাকে। আবার কেউ কেউ মেঘনাার মোহনার আগে অর্থ্যাৎ নোয়াখালী, চট্রগ্রাম, প্রভৃতি জেলার  এবং হাতিয়া, সন্দীপ প্রভৃতি দ্বীপের দক্ষিণভাগে অবস্থিত বনভাগকেও সুন্দরবনের অন্তর্গত মনে করেন।

এসব এলাকার মানুষ প্রথমে সুন্দরবন অভিযান করেন মাছ শিকারের জন্য, তারপর লবণ চাস, এরপর কাঠ কাটা। আর কাঠ কাটতে গিয়ে মৌচাকের দর্শন। অতঃপর মধু সংগ্রহ।  এভাবে মৌয়ালের সৃষ্টি। জমিদারদের শাসনামলে শখের বশে শুরু হলেও মৌয়ালদের এটি পেশা হয়ে ওঠে ইংরেজ শাসনকালে।

বাঘ মানুষের লড়াই

ইনতাজ মিয়া ৩০ বছর ধরে সুন্দরবনে মধু ও মোম সংগ্রহ করে আসছেন। তিনি দোয়া দুরুদ, তন্ত্র মন্ত্র শক্তিতে বিশ্বাসী। একবার এক রোদ ঝলমলে সুন্দর সকালে সুন্দরবনের খালে নৌকার গলুইতে বসে বনের শোভা দেখছিলেন। তখন ভাটা পড়তে শুরু করেছে আর নৌকাটি পাড়ের একেবারে কাছে।

ইনতাজ মিয়ার ছেলে করিম নৌকার মধ্যে রান্নার কাজে ব্যস্ত। হঠ্যাৎ করিমের চিৎকার- বাঘ, বাঘ! তারা দুজন কিছু বুঝে ওঠার আগেই ২শ কেজি ওজনের প্রাণীটি ইনতাজ মিয়ার ওপর হামলে পড়ে। বাঘের ভারে নৌকা কত হয়ে যায়। বাঘ  ইনতাজ মিয়ার ঘাড় মটকাতে সুযোগ পেল না, থাবা পড়ল জানুতে। ইনতাজ মিয়া ভয়ে প্রায় সংজ্ঞাহীণ। কিন্তু সংজ্ঞাহীন হলে তো চলবে না ! তিনি বাঘের মাথা খাবালে ধরে সজোরে চিৎকার করে বললেন; তুই পারবি না, তুই ফিরে যা, ইনতাজ মিয়ার ক্রুদ্ধ ধিক্কার শুণে বাঘ গেল হকচকিয়ে, ততক্ষণে দলের অন্য সঙ্গীরাও  এসে গেল। গগণবিদারী কন্ঠে বাঘকে গালিগালাজ ও লাঠিপেঠা করতে লাগল সবাই। বাঘ তখন নৌকা থেকে লাফিয়ে পড়ে জঙ্গলে পালিয়ে যায়। ইনতাজ মিয়া প্রাণে বেচে বনবিবির উদ্দেশে শতকোটি সালাম জানালেন।

ধীরেন বাগাচি ৪০ বছর ধরে সুন্দরবনে মধু আহরণের কাজ করছেন। মধুমাসের কোনে একদিন, মৌমাছিদের বিচরণের ক্ষেত্র বুঝে  একটি ছোট খাল বেয়ে অগ্রসর হচ্ছেন মৌচাকের খোজে। কিছু একটা আন্দাজ করে ধীরেন চারজনের দল নিয়ে নৌকা ছেড়ে জঙ্গরে ঢুকে পড়লেন। মৌচাক খোজার কৌশল হিসেবে দলটি একজন থেকে অন্যজন ১০ মিটার দুরুত্ব রেখে মৌচাক খুজছেন। বনের অভ্যান্তরে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষার প্রয়োজনে ধীরেন কথা বলছেন, অন্যদের পরামর্শ ও নির্দেশ দিচ্ছেন এবং নিজেও হাটছেন। হঠ্যাৎ অনুভব করলেন দলের অন্যদের কাছ থেকে কোনো সাড়া মিলছে না। তখন সঙ্গীদের খোঁজে সম্ভাব্য পথে এগিয়ে দেখতে পেলেন তার এক সঙ্গী হরিকে একটি বাঘ ঘাড়ে কামড়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।

ইনতাজ মিয়ার ছেলে করিম নৌকার মধ্যে রান্নার কাজে ব্যস্ত। হঠ্যাৎ করিমের চিৎকার- বাঘ, বাঘ! তারা দুজন কিছু বুঝে ওঠার আগেই ২শ কেজি ওজনের প্রাণীটি ইনতাজ মিয়ার ওপর হামলে পড়ে। বাঘের ভারে নৌকা কাত হয়ে যায়। বাঘ ইনতাজ মিয়ার ঘাড় মটকাতে সুযোগ পেল না, থাবা পড়ল জানুতে। ইনতাজ মিয়া ভয়ে প্রায় সংজ্ঞাহীন। কিন্তু সংজ্ঞাহীন হলে তো চলবে না! তিনি বাঘের মাথা খাবলে ধরে সজোরে চিৎকার করে বললেন: ‘তুই পারবি না, তুই ফিরে যা….‘ইনতাজ মিয়ার ক্রুদ্ধ ধিক্কার শুনে বাঘ গেল হকচকিয়ে, ততক্ষণে দলের অন্য সঙ্গীরাও  এসে গেল। গগণবিদারী কন্ঠে বাঘকে গালিগালাজ ও লাঠিপেটা করতে লাগল সবাই। বাঘ তখন নৌকা থেকে লাফিয়ে পড়ে জঙ্গলে পালিয়ে। ইনতাজ মিয়া প্রাণে বেঁচে বনবিবির উদ্দেশে শতকোটি সালাম জানালেন।

বাকি দুজন অজ্ঞান হয়ে ভূলূন্ঠিত। ধীরেন তার হাতের গরানের লাঠি দিয়ে বাঘটিকে চিৎকার করে তাড়া করতে লাগলেন। বাঘটি শিকার নিয়ে পালাতে চেষ্টা করছে, কিন্তু মৃতের এক পা গরান জঙ্গলে এমনভাবে আটকে গেল যে বাঘ কিছুতেই তা ছাড়িয়ে নিতে পারছিল না। আর ধীরেনও লাঠি দিয়ে বাঘটিকে তাড়াচেছন। শেষে বাঘ ও ধীরেনের মধ্যে মৃতের দেহ নিয়ে যুদ্দ শুরু হয়ে গেল। বাঘটি ঘাড় ধরে সামনে টানছে, ধীরেন পেছরেনর এক পা ধরে সহ কর্মীর মৃত দেহ টানছেন। ততক্ষণে আর দুই সঙ্গীর জ্ঞান ফিরে এসেছে। তারা ধীরেনের সঙ্গে যোগ দিয়ে বাঘটিকে পেটাতে শুরু করল। বাঘ তখন শিকার ছেড়ে জঙ্গলের ভেতরে চলে গেল।

বাঘের চেয়েও ভয়ঙ্কর বনদস্যু

প্রতি বছরের মতো এবারো ১ এপ্রিল বন বিভাগের খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের স্থানীয় ফরেষ্ট স্টেশনের অনুমতি নিয়ে পেশাদার মৌয়ালরা সুন্দরবনের মধু মহরে (মোম ও মধু সংগ্রহে) প্রবেশ করছেন। এখন চলছে দ্বিতীয় দফায় মধু আহরণ। মৌয়ালদের অভিযোগ, সরকারি রাজস্ব পরিশোধ করে বনে ঢোকার আগেই তাদের বনদস্যূদেরকে দলপ্রতি ২০ হাজার টাকা চাদা দিতে হচ্ছে।

সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগের খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জ অফিসে সু্ত্রে জানা গেছে, ১   এপ্রিল থেকে সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি নিয়েছেন মৌয়ালরা। মধু ও মোম সংগ্রহের জন্য এবার জনপ্রতি ৭শ ৩০ টাকা রাজস্ব নির্ধারণ করা হয়েছে এবং প্রতিটি অনুমতি নিয়ে  একদলে সর্বোচ্চ সাতজন মৌয়াল বনে প্রবেশ করতে পারবে। এই মওসুমে বন বিভাগের দুটি রেঞ্জ থেকে মধু ও মোম সংগ্রহের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ২ শ ৫০ কুইন্টাল বা ৫ হাজার ৬শ ২৫ মণ (মধু) ও ৫শ ৯০ কুইন্টাল বা ১ হাজার ৪শ ৭৫ মণ মোম। মৌয়ালদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে বনে বনদস্যুদের উৎপাত বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা আতঙ্কে রয়েছেন। যে কারণে বন বিভাগের মোম ও মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা উপজেলার মঠবাড়ি গ্রামের মৌয়াল মজিবার বলেন, ‘মহলে এবা মৌ আগেরবারের চেয়ে ভালো। কারণ এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় বনে মৌচাক বেশি। কিন্তু এবার ডাকাতির চাপ যে পরিমাণ দেখছি তাতে আর সুন্দরবনে আসতে মন চায় না। একই আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছেন উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি গ্রামের মৌয়াল কাওচার গাজী, শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা গ্রামের মৌয়াল নূর বকস মোল্লাসহ শতাধিক মৌয়াল। তারা বলেন, ‘মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিয়ে দীর্ঘকাল আমরা বনে বাঘের ভয় উপেক্ষা করে মোম মধু সংগ্রহ করে আসছি। কোনোবার লাভ বেশি পাই, আবার কোনোবার চালানটা ফিরে।  এ পেশাটি আমাদের কাছে নেশার মতো হয়ে গেছে। চাইলেও ছাড়তে পারি না। কিন্তু বর্তমানে বনদস্যূদের অত্যাচার ও চাদার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় কষ্টের রোজগার ও দাদনের টাকা ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে বলে মনে করেন এসব পেশাদার মৌয়াল। আবার মধু সংগ্রহে আনুষাঙ্গিক খরচের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় চালান বাচাতে মধুর সঙ্গে বিভিন্ন উপকরণ মিশিয়ে লোকালয়ে আনতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অনেক মৌয়াল জানিয়েছেন। তবে এ কাজে পেশাদার মৌয়ালদের মন সায় দেয় না এমন কথাও বলেছেন কেউ কেউ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মৌয়ালরা জানান, জাহাঙ্গীর বাহিনী, আলিফ বাহিনী, আমিনুর বাহিনী, খোকা বাবু বাহিনী, আলিম বাহিনী, রুহুল আমিন বাহিনী, তালেব বাহিনী, ফরহাদ বাহিনী, মঞ্জু বাহিনীসহ কমপক্ষে ১০ -১২ টি দস্যুবাহিনীর চাদার টাকা পরিশোধ করে বন বিভাগের অনুমতির মতো আরো একটি অনুমতি নিয়ে বনে ঢুকতে হয় তাদের।  এরা সুন্দরবনের বাঘের চেয়েও ভয়ঙ্কর তারা দাবি করেন, এ মৌসুমে সুন্দরবনের গহিনে কোস্টগার্ডের পাশাপাশি র‌্যাব ও পুলিশের সার্বক্ষনিক টহলের ব্যবস্থা করলে মৌয়ালরা নির্বিঘ্নে মধু ও মোম সংগ্রহ করতে পারবেন।

পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক তৌফিক এলাহী বলেন, ‘এবার সুন্দরবনে প্রবেশের আগে মৌয়ালদের সব রকমের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। মৌয়ালদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা চলছে। তিনি জানান, সুন্দরবনে মোম ও মধু সংগ্রহের জন্য ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত তিন দফায় মৌয়ালদের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। তবে দ্বিতীয় দফায় অর্থাৎ মে মাসে মৌয়ালর সুন্দরবন থেকে বেশি মধু সংগ্রহ করেন।

সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগর উপজেলার সোরা গ্রামের মৌয়াল আজগর আলী জানান, এবার আবহওয়া ভালো থাকায় মধু সংগ্রহের পরিমাণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু বনদস্যুদের তৎপরতার কথা ভেবে আশাবাদী হওয়া যাচেছ না। বুড়ি গোয়ালিনী গ্রামের ছমির শেখ জানান, তাদের সাত সদস্যের একটি দল মধু সংগ্রহের জন্য বন বিভাগ থেকে অনুমতি নেয়ার পর বনদস্যুরা তাদেরকে নৌকাপ্রতি ২০ হাজার টাকা দিয়ে তবেই বনে ঢোকার কথা জানায়। তিনি আরো জানান, পশ্চিম সুন্দরবনে তৎপর সব বনদস্যু বাহিনীকে একই হারে তাদের চাঁদার টাকা দিতে হচ্ছে।

ওই উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর ও বুড়িগোয়ালিনী এলাকার কয়েকজন মৌয়াল সরদার বনে, এবার মধু বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় বনদস্যূরা চাদার অঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। গত বছর নৌকা প্রতি এক মাসের জন্য দিতে হয়েছে ১০ – ১৫ হাজার টাকা। এবার দাবি করা হচ্ছে ২০ – ২৫ হাজার টাকা।

২৬ শে মার্চ পশ্চিম সুন্দরবন এলাকার ত্রাস খোকা বাবু বাহিনীর দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা সুফিয়ান গাজী গ্রেফতার হওয়ার পর সাংবাদিকদের জানান, ‘আমাদের ২৫ – ৩০ জনে দল চালাতে টাকা দরকার। আমাদের যারা শেল্টার দেয়, তাদেরও টাকা দিতে হয়, যে কারণে চাদার পরিমাণ বাড়াতে হয়েছে। ২৩ এপ্রিল পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কটকা অভয়রণ্য এলাকায় মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে বনদস্যুদের গুলিতে মাহবুব তালুকদার, লিটন হাওলাদার নামের তিন মৌয়াল আহত হন। এ সময় চাঁদার দাবিতে রাজ্জাক তালুকদার ও রশিদ পেয়াদা নামে দুই মৌয়ালকে অপহরণ করে বনদসূরা।

শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিঞা জানান, বনজীবীরা বন দস্যুরেদ হাতে নির্যাতিত হলেও পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন না। বরং তারা গোপনে মিটিয়ে নেন। সুন্দরবন অনেক বড় এলাকা। বনজীবীদের সহযোগীতা পেলে বনদস্যুদের তৎপরতা বন্ধ করা সম্ভব।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন মৌয়াল জানান, মধু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে তাদের বনে যেতে হয়। কিন্তু বনদস্যুদের টাকা, দাদনের সুদ ও আসল, বন বিভাগের টাকাসহ অন্যন্য খরচ করে বন থেকে ফিরে লোকসানে পড়তে হয় কিন, তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।