আর্সেনিকের বিষক্রিয়াঃ আতংকিত মানুষ

  • by

আর্সেনিকের বিষক্রিয়াঃ আতংকিত মানুষ

সারা দেশব্যাপী এখন যে আতংকটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়েছে, তা হচ্ছে আর্সেনিক আতংক। আর্সেনিক একটি মারাত্মক ধরনের বিষ। এই আর্সেনিক সমস্যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হওয়া স্বত্তেও দেশে আর্সেনিক বিষক্রিয়া সর্ম্পকে গবেষণার প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা নেই। চিকিৎসা সুবিধাও যথেষ্ট নয়। রোগ নির্ণয় ও পর্যবেক্ষনের জন্য নেই কোন গবেষণাগার। আর তাই আতংকগ্রস্থ বিভিন্ন শ্রেণীর জনগণ আর্সেনিকের ব্যাপারে নান প্রশ্নের সম্মুখীণ হচ্ছে এবং আক্রান্ত ব্যক্তি বিভিন্ন সমস্যায় ভুগে মৃত্যুর দিন গুণছে এবং মারা যাচ্ছে।

আর্সেনিক দুষণ এবং একটি পরিসংখ্যান

স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের একটি সুত্রে জানা যায়, ১৯৮৪ সালের প্রথম দিকে বাংলাদেশে আর্সেনিক দুষণ সনাক্ত হয়। বর্তমানে দেশের ১৫ টি জেলায় বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল প্রবলভাবে আর্সেনিক দুষণের কবলে পতিত হয়েছে এবং এ পর্য্নত ( ১ অক্টোবর ৯৬) সারা দেশে প্রায় ৬ শ অগভীল নলকুপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতিতি ধরা পড়েছে।

দেশে এখন পর্যন্ত আর্সেনিক আক্রান্তের সংখ্যা সঠিকভাবে নিরূপণ করা সম্ভব না হলেও বিশেষ মহলের উদ্ধৃত্তি দিয়ে কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে আর্সেনিক দূষিথ পানি পান করার ফলে দেশে প্রায় ১০ লক্ষ লোক আর্সেনিক ঘটিত জটিলতায় সম্মুখীন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তার মতে , নারায়নগঞ্জ, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, খুলনা,  মেহেরপুর, বাগেরহাট, চাদপুর,  পাবনা, যশোর, ফরিদপুর, মুণ্সিগঞ্জসহ অন্যান্য স্থানে যেভাবে আর্সেনিক দুষণের সন্ধান পাওয়া যাচেছ, তাতে দেশে প্রায় ১২ লাখের ও বেশি মানুষ বিষাক্ত আর্সেনিকের শিকার হতে পারে। অপরদিকে, ১৯৯৫ সালে ভারথের মাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে র ভূ – গর্ভস্থ পানিতে ‘আর্সেনিক’ শীর্ষক  এক সেমিনারে বিশেষজ্ঞগণ উল্লেখ করেছেন,  পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী বাংলাদেশসহ ৮ টি জেলায় প্রায় ১ কোটি লোক আর্সেনিক দুষিত বিষক্রিয়ায় ঝুকির মধ্যে রয়েছে।

       নিষিদ্ধ ব্যবহার

বিশেষজ্ঞদের পর্যালোচনা থেকে জানা যায়, এক সময় আর্সেনিক কাঠ সংরক্ষণে পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজতাকরণ ও সংরক্ষণে, স্বর্ণের কাজে এবং পুতুলের পেইন্টিং এর পিগমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এ পদার্থটি মূলতঃ বিষ হিসেবে বিশেষ করে ইদুর ধ্বংসের জন্য এবং কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার হতো। তাছাড়া জ্বর, রক্তশূণ্যতা, সিফিলিস রোগেও এ পর্দাথটি এক সময় ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হতো। পরবর্তীতে আর্সেনিকের ভয়াবহ  প্রতিক্রিয়া এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়।

আর্সেনিকের বিষক্রিয়া ঃ নিঃশব্দ মৃত্যুদূত

চিকিৎিসক ও বিশেষজ্ঞরে মতে,  আর্সেনিক মিশ্রিত পানি পানের ২৪ সপ্তাহের মধ্যে এর প্রতিক্রিয়া মানবদেহে প্রতিফলিত হয়। আর্সেনিক মিশ্রিত পানি ফুটালেও বিষক্রিয়া হারায় না। মানবদেহে আর্সেনিকের প্রতিক্রিয়া বিস্তারেরর গতি নির্ভর করে পানিতে মিশ্রিত আর্সেনিকের পরিমাণের ওপর। আর্সেনিকের অধিক মাত্রায় প্রয়োগে তাৎক্ষনিক মৃত্যু হয় এবং অল্প মাত্রায় প্রয়োগে হয় ধীর বিষক্রিয়া যার প্রতিক্রিয়ায় মানবদেহে নানা  রকম সমস্যা দেখা দেয় এবং ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

বিশেষজ্ঞ মহলের বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা থেকে জানা গেছে, আর্সেনিক মিশ্রিত পানি পান করার পর প্রথমতঃ দেহে চর্মরোগ দেখা দেয় এবং শরীর হাত পার আকষ্মিকভাবে ফুলে যায়। ধীরে ধীরে শরীরে কালো কালো দাগ পড়তে থাকে এবং হাতে পায়ের সংবেদনশীলতা কমে যায়। এছাড়াও লক্ষণ হিসেবে আক্রান্ত ব্যক্তির চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখে প্রদাহ, মাথা ব্যথা, শরীরের কোথাও কোথাও চামড়া মোটা হয়ে সেখানে ঘা বা ফোসকা পড়া, চুলকানি, জ্বর,মাথার চুল ওঠে যাওয়া, শারীরিক দুর্বলতা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

রোগীর অবস্থা জটিল আকার ধারণ করলে হাতে পায়ে পচন ধরা, হাপানিসহ রক্ত আমায়শয়, ব্রংকাইটিস,  যক্ষা,  ত্বকের ক্যান্সার, লিভার পচন, বুকে পানি জমা, ফুসফুসে ক্যান্সার, কিডনি নষ্ট,  হৃদরোগ প্রভৃতি হতে পারে। এসব লক্ষণ ও উপসর্গ প্রকাশ পেতে রোগীর কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় নেয়। আর্সেনিকের ধীর বিষক্রিয়ার ফলে সবচেয়ে মারাত্মক যে সমস্যাটি দেখা যায় তা হচ্ছে, ধীরে ধীরে শরীরের ত্বক ও মাংস ধসে পড়ে। জানা যায়, আর্সেনিক দুষণযুক্ত অঞ্চলগুলোতে ইতিমধ্যে বহু লোকই এ ধরনের রোগ ও জটিলতায় শিকার হয়েছে।

গ্রহণযোগ্য মাত্রা

এক সময় ধারণা ছিল প্রতি লিটার পানিতে  ০. ০৫ মিলিগ্রাম পর্যন্ত আর্সেনিক মানুষের দেহের জন্য গ্রহণযোগ্য। কিন্তু বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতি লিটার পানিতে গ্রহণযোগ্য মাত্রা হচ্ছে ০. ০১ মিলিগ্রাম। এর বেশি মাত্রায় থাকলে অবশ্যই তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর এবং বিষক্রিয়া ঘটানো স্বাভাবিক।

আর্সেনিক সংক্রামক নয়

পিজি হাসপাতালের ত্বক ও যৌন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এ জেড এম মাইদুল ইসলাম বলেন,  আর্সেনিক আক্রান্ত রোগ সংক্রামক নয়। বংশগত বা পারিবারিকভাবে এর বিস্তারের কোন আশংকা নেই। তার মতে, আর্সেনিক দুষণ মোকাবিলায় নিরাময়ের চেয়ে প্রতিরোধই শ্রেয় এবং এ নীতি অবলম্বণ করলে যথেষ্ট ফলপ্রসু হতে পারে।

আর্সেনিক দুষণের কারণ ঃ মন্তব্য ভিন্নতর

আর্সেনিক দুষণের সঠিক কোন কারণ এখন পর্যন্ত উদঘাটন হয়নি পানীয় জলে আর্সেনিক দুষণের কারণ সর্ম্পকে বিভিন্নমুখী তথা পরিবেশিত হওয়ায় মানুষের আশংকা যেমন প্রতিদিন বেড়ে চলেছে,  তেমনি নান রকম বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। কোন কোন বিশেষজ্ঞমহল মনে করছেন, পার্শ্ববতী দেশ ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ ভাটি এলাকায় বলে এবং পশ্চিমবঙ্গ সংলগ্ন নদীগুলোর মাধ্যমে প্রবাহিত পানি থেকে এ দেশে আর্সেনিকের বিস্তার হতে পারে। তাছাড়া ফারাক্কার কারণে ভুগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নীচে নেমে যাওয়ায় সেখানে যে পানি শূণ্যতা জনিত অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাতেও আর্সেনিকের বিস্তার হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদরে সুত্র মতে, আরও জানা যায়, সেচ ও পানীয় জলের জন্য ব্যাপকভাবে নলকূপ খননের ফলে ভুগর্ভস্থ পানির ভান্ডার প্রায় নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার কারণে এর প্রতিক্রিয়ায় ভূ গর্ভে আর্সেনিকের স্তর উন্মুক্ত হয়ে গেছে এবং পানি উপরে উঠে আসছে। সম্প্রতি কোন কোন বিশেষজ্ঞমহল পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থায় ব্যবহৃত কাঠের খুটিগুলোতে মিশ্রিত রাসায়নিক কেমিক্যাল আর্সেনিক দুষণেল জন্য দায়ী বলে দাবি করেছেন। আর্সেনিক দুষণের সঠিক কারন কোনটি তা সময়ই বলে দেবে। তবে যত দ্রুত সম্ভব এ প্রশ্নের উত্তর অর্থ্যাৎ আর্সেনিক দুষণের প্রকৃত কারণ খুজে বের করা অবশ্যই প্রয়োজন এবং গুরুত্বপূর্ণ।

       আর্সেনিক প্রতিরোধ এবং সাম্প্রতিক তথ্য

চিকিৎসকদের মতে, আর্সেনিক দুষণ আক্রান্ত মানুষের সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি এখনও আবিষ্কৃত হয়নি এবং দেহ থেকে আর্সেনিকে নিষ্কাশন করার কার্যকরী ওষুধও পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত একটি খবর থেকে আর্সেনিক দুষণ প্রতিরোধের চমৎকার কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। কলিকাতার বিশিষ্ট চিকিৎসকদের মতে,পুষ্টিকর খাবার ও আর্সেনিকমুক্ত পানি ব্যবহার করলে শরীরে বিষক্রিয়ার মাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছানোর আগে এ পদ্ধতি অবলম্বন করা হলে অনেকে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। তাদের মতামত তেকে আরও জানা যায় নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেলে আর্সেনিক দুষণ অনেকাংশে ঠেকানো যায়। আমলকি, কামরাঙা, বাতাবী লেবু, করমচা, সবজি এবং কাঠালের বিচি, সয়াবিন, মাংস ও ডিমের মতো পুষ্টিকর খাদ্য আর্সেনিক দুষণ প্রতিরোধ বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। বিজ্ঞানীদের মতে, নদী পুকুর ও বিলের পানিতে আর্সেনিক থাকে না। আর তািই এ পানি ফিল্টার করে সরবারহ করা হলে লোকজন আর্সেনিক দুষণের হাত থেকে রক্ষা পাবে।

প্রসঙ্গ কথা

সারাদেশে বর্তমানে আর্সেনিক দুষণের মাত্রা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে,  তাতে সবাই ভীষণভাবে আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়েছে এবং  এটাই স্বাভাবিক। আর্সেনিক সমস্যা এখন একটি জাতীয় সমস্যা। তাই নলকুপের আর্সেনিক দূষিত পানি কোন সহজ পন্থায় পরিশোধন করে নেয়া যায়, তা রেডিও,  টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানসাধারণকে যত দ্রুত সম্ভব জানাতে হবে। তাছাড়া কোন এলাকায় একটি নলকুপের পানিতে ক্ষতিকর মাত্রায় আর্সেনিকের উপস্থিতি ধরা পড়ার সাথে সাথে সেটিসহ  এলাকার অন্যান্য নলকুপগুলোও বন্ধ করতে হবে। সর্বোপরি, আর্সেনিকমুক্ত পানি পান করার জন্য জনগণকে সচেতন করতে হবে এবং আর্সেনিক আক্রান্ত লোকদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থার করতে হবে। আর্সেনিকের আতংকে আতংকিত হয়ে চুপচাপ বসে না থেকে আর্সেনিক দুষণ প্রতিরোধে অব্যশই সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত।

(সুত্রঃ বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা)

প্রদীপ সাহা

 

বিশেষ প্রয়োজনেঃ 

আপনার যে কোন সময় এম্বুলেন্স সার্ভিস দরকার হতে পারে। যে কোন ধরনের এম্বুলেন্স সার্ভিস পেতে হলে খালেদ এম্বুলেন্স সার্ভিস এ যোগাযোগ করুন। অথবা কল করুন এখনই ০১৯৩৩২৪৬৫৭৭ – এই নাম্বারটি মনে রাখুন অথবা আপনার মোবাইল এ সেভ করুন এখনই। kmosarrof@gmail.com

আমাদের এম্বুলেন্স সার্ভিস ভিজিট করুনঃ https://khaledrentacar.com/ambulance-service/