নবজাতকের যত্ন

  • by

 নবজাতকের যত্ন

অধ্যাপক এম আর খান

ডাঃ এ এফএফ সেলিম

শিশুদের দিনের কোন সময়ে গোসল করানো উচিত, এ সমন্ধে মতভেদ রয়েছে। তবে যখনই করানো হোক না কেন, তা প্রতিদিন একই সময়ে হওয়া উচিত। আমাদের দেশে সকাল ১০ টা থেকে ১২ টার মধ্যে গোসল করাবার রীতি প্রচলিত আছে। অনেকে রাতে শিশুকে গোসল করাতে বলে থাকেন। তাদের মতে, এরপর সারারাত শিশু নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকে।

ঘরের ভিতরই কোন এক স্থানে শিশুকে গোসল করানো উচিত। বাইরে খোলা বাতাসে, রৌদ্রে অন্য কোথাও করালে তার ঠান্ডা লাগার প্রচুর সম্ভাবনা থাকে। গোসলের জন্য নির্দিষ্ট পাত্রে গরম পানির সাথে ঠান্ডা পানি মিশিয়ে তাপমাত্রা ঈষৎ গরম করতে হবে। বেশি গরম পানি দিয়ে গোসল করালে শিশুর গায়ের চামড়া পুড়ে যেতে পারে। পাত্রে পাশেই বিছানার উপর শুকনো তোয়ালে অথবা গামছাজাতীয় জিনিস গা মোছাবার জন্য তৈরি রাখতে হবে। তার পাশে শিশুর গোসলের পর পরবার জামা কাপড়ও তৈরি থাকবে।

অনেকে গোসলের আগে শিশুর দেহে খাঁটি সরিষার তেল অথবা অলিভ অয়েল মাখাতে বলেন। তবে যাই করা হোক না কেন তা খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে, যেন তার ঠান্ডা না লাগে। অবশ্য শিশু বড় হয়ে গেলে, গোসলের আগে  এমনি তেল মাখিয়ে অনেকে তাকে রৌদ্রে কিছুক্ষণ রাখতে বলেন। এর পর শরীর ঠান্ডা হলে গোসল করাতে বলেন। কিন্তু খুব ছোট শিশুদের বেলায় এ সব করা নিতান্তই ভুল।

গোসল করাবার আগে যিনি তা করাবেন, তার দুই হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নেয়া উচিত। হাত থেকে আংটিজাতীয় জিনিস খুলে ফেলা উচিত। পরিচর্যাকালীনর হাতের নখ কোন দিনই বড় রাখা উচিত নয়।

গোসল খুব তাড়াতাড়ি করাতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, যেন কোন ক্রমেই শিশুর কানে পানি না যায়। অনেকে এই জন্য গোসলের আগে কিছু তুলা সামান্য অলিভ অয়েল বা অন্য কোন তেলে ভিজিয়ে দু কানে দিয়ে নিতে বলেন এবং গোসলের পরপরই তা খুলে ফেলতে বলেন। নবজাতকের গোসল করাবার সময় নাভী শুকাবার আগে খেয়াল রাখতে হবে যেন তা না ভিজে যায়।

গোসলের পর পরিষ্কার তোয়ালে বা গামছাতে শিশুকে শুইয়ে দিয়ে মৃদু চাপ দিয়ে সমস্ত শরীর ভালোভাবে মুছে দিতে হবে। মোছবার সময় জোরে ঘষাঘষি না করাই ভালো। শিশুর শরীরের চামড়া অত্যন্ত পাতলা ও মোলায়েম। তাই শিশুকে ব্যথা দিয়ে শরীর মোছা ঠিক নয়।

গোসলের পর শরীরে অনেকে পাউডার দিয়ে থাকেন, পাউডার ব্যবহার করলে, পাফ দিয়ে তা করা উচিত, যেন বেশি পাউডার দেয়ার ফলে ‍গুড়ি গুড়ি পাউডার কুচকি, গলার নীচে, বগলে বা অন্যান ভাঁজে জমে না থাকে।

মেয়ে শিশুদের স্ত্রী অংগে অনেক সময় ময়লা জমে। তাই গোসলের আগে ঐ স্থানটা তুলো ভিজিয়ে পরিষ্কার করে দেয়া উচিত। খেয়াল রাখতে হবে, যেন কোন ক্রমেই তুলো দিয়ে নীচ থেকে উপরে এমনিভাব পরিষ্কার করা না হয়। কারণ, তাতে মুত্রনালীর প্রদাহ হতে পারে।

শিশুর জামা, বিশেষ করে নবজাতকের ক্ষেত্রে খুব সোজা কাটিং এর হওয়া উচিত, যেন পরাতে এবং খুলতে বেগ পেতে না হয়। জামা অবশ্যই সুতি হওয়া উচিত। বাজার থেকে কেনা জামা গরম পানিতে সিদ্ধ করে শিশুকে পরতে দেয়া উচিত। অনেকে নবজাতকের জামা এবং ন্যাপী পরাবার আগে ইস্ত্রি করে নিতে পছন্দ করেন। তাতে অবশ্যই ইস্ত্রির গরমে কাপড়ের সব জীবাণু মরার বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়।

জামাকাপড় অবশ্যই ঢিলে ঢালা থাকতে হবে। গ্রীষ্মকালে কৃত্রিম শীতের ভয়ে একগাদা কাঁথা কাপড় দিয়ে না জড়িয়ে শিশুকে খোলামেলা রাখতে হবে। তাছাড়া, তার ফলে শিশু হাত পা ঠিকভাবে ছোড়াছড়ি করতে পারে, যা তার স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য একান্ত প্রয়োজন। শিশুকে খোলামেলা পরিবেশে বড় হতে দেয়া উচিত। সম্বব হলে প্রতিদিন বিকেলে তাকে ঘরের বাইরে নিয়ে হাটা উচিত। একটু বড় হলে আরো খোলা পরিবেশে তাকে খেলতে নিয়ে যাওয়া যায়। তার ঘর আলোবাতাসে ভরপুর থাকতে  হবে। প্রয়োজনে ঘরের দু পাশের জানালা খোলা রাখতে হবে, মুক্ত বাতাস চলাচলের জন্য। শিশুকে মাঝে মাঝে চিৎ থেকে কাৎ কাৎ থেকে বুকের ওপর শোয়ানো উচিত।

       নবজাতকের খাবার কি হবে?

আজ এ বিষয়ে আর কোন সংশয় নেই যে, শিশুর জীবনের প্রথম পাঁচ মাসের জন্য মায়ের বুকের দুধ হচ্ছে সবচেয়ে উপাদেয়, উত্তম আর উৎকৃষ্ট খাদ্য। এর কোন বিকল্প নেই, বিকল্প হতেও পারে না। শিশুর জন্মের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, তাকে বুকের দুধ দেয়া উচিত। অনেকে নবজাতকের নাভী আলাদা করার আগেই মায়ের বুকের দুধ খওয়াতে বলেন। তাদের মতে, এতে গর্ভফুল তাড়াতাড়ি শ্লামিত হয়,  তবে এত তাড়াতাড়ি সম্ভব না হলেও জন্মের কয়েক ঘন্টার মধ্যে তাকে অবশ্যই খাবার দেয়া উচিত।

নবজাতকের দেহে জমা থাকা শর্কারার পরিমাণ খুবই কম। মায়ের দেহ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর সে আর মায়ের কাছ থেকে শর্করা বা অন্য খাবার পেতে পারে না। তখন তার দেহে জমে থাকা শর্করার ব্যবহৃত হয় যা মাত্র কয়েক ঘন্টায়ই নিঃশেষিত হয়ে যায়। তাই এ সময়ের মধ্যে খাবার না দিলে রক্তে শর্করার বা গ্লুকোজের অভাব দেখা দিবে, যা শিশুর খিচুনির জন্ম দিতে পারে এবং পরিণামে তার অপরিপক্ব মস্তিষ্কের কোন মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।

অনেকে মনে করেন, মায়ের বুকে প্রথম যে ঘন, হলুদ এবং অল্প পরিমাণ দুধ তৈরি হয় তা নষ্ট, আসলে তা ঠিক নয়। এ দুধের নাম কোলস্ট্রাম। কোলস্ট্রাম শিশুর জন্য অত্যান্ত উপকারী।

 

বিশেষ প্রয়োজনেঃ 

আপনার যে কন সময় এম্বুলেন্স সার্ভিস দরকার হতে পারে। যে কোন ধরনের এম্বুলেন্স সার্ভিস পেতে হলে খালেদ এম্বুলেন্স সার্ভিস এ যোগাযোগ করুন। অথবা কল করুন এখনই ০১৯৩৩২৪৬৫৭৭ – এই নাম্বারটি মনে রাখুন অথবা আপনার মোবাইল এ সেভ করুন এখনই। kmosarrof@gmail.com

আমাদের এম্বুলেন্স সার্ভিস ভিজিট করুনঃ https://khaledrentacar.com/ambulance-service/