ভ্রমণকালে হাঁপানি রোগের সতর্কতা

  • by

ভ্রমণকালে হাঁপানি রোগের সতর্কতা – শ্বাসকষ্ট হলে করণীয়

শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় – ভ্রমণকালে বাস, ট্রাক, ট্রেন ও ট্যাক্সি ইত্যাদি পরিবহনের চলার সময় বিভিন্ন হাঁপানির উদ্রেককারী উৎপাদনের সম্মুখীন না হওয়া।

শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগ হবার যেমন কোন বয়স নেই তেমনি এটি শুরু হবারও নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। যে কোন সময় যে কোন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগীদের ভ্রমণকালে বিশেষ সর্তকর্তা অবলম্বণ করতে হবে। অ্যাজমা রোগীর বাস, ট্রাক, ট্রেন ও ট্যাক্সি ইত্যাদি পরিবহনের চলার সময় বিভিন্ন হাঁপানির উদ্রেককারী উৎপাদনের সম্মুখীন হয়। কারণ এস বাহনে থাকে এলার্জি সৃষ্টিকারী নানা রকম বস্তু। যেমন পরিবহনের বসার গদি,  কার্পেট ও বাইরের বাতাস আসা যাওয়ার জানালাগুলোতে জমে থাকা ধুলো এবং সবচেয়ে ক্ষতিকর ছত্রাক। সাধারণত সিগারেটের ধোয়া ও দুষিত বায়ু হাঁপানি রোগীর জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর। তাই এসব রোগীর ভ্রমণের সবচেয়ে উত্তম সময় হচ্ছে খুব ভোরে এবং রাতে। কারণ এ সময় বায়ু দুষণ কম হয়। অ্যাজমা রোগীদের ক্ষেত্রে দূরের পথ ভ্রমণের সময় শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে থাকাই শ্রেয়। যাদের শ্বাসকষ্টের পরিমাণ বেশি এবং যারা ইনহেলার ও নেবুলাইজার ব্যবহার করে থাকেন তাদের জন্য ইনহেলার ও বহনযোগ্র নেবুলাইজার ভ্রমণের সময় সঙ্গে রাখতে হবে। এছাড়াও রোগীরা  কোন বাহনে চলাচলের পূর্বে বাহনের দরজা বা জানালা বেশ কিছুক্ষণ সময় খুলে রাখলে ভাল। এতে করে পরিবহনে অ্যাজমা সৃষ্টিকারী এলার্জির পরিমাণ কিছুটা কমে যায়।

শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য বিমান ও জাহাজে চলাচল করা কিছুটা নিরাপদ। কারণ আর্ন্তজাতিক বিমার রুটে

ভ্রমণকালে হাঁপানি রোগের সতর্কতা

ভ্রমণকালে হাঁপানি রোগের সতর্কতা

ধুমপান পুরোপুরি বর্জিত না হলেও অভ্যন্তরীন বিমানের ক্ষেত্রে ধুমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর বর্তমানে জাহাজে ভ্রমনকারীদের জন্য বিভিন্ন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তথাপিও হাঁপানি রোগীদের জন্য বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর দিক হচ্ছে বিমানের অভ্যান্তরীন বায়ু। বিমানে ভ্রমণের সময় অ্যাজমা রোগীদের উপদেশ হাঁপানি রোগীর যদি কোন খাবারে এলার্জি থাকে তবে তাকে বিমানের খাদ্য গ্রহণের পূর্বেই সতর্ক হতে হবে। আমরা যতটুকু জানি, বিমানের খাদ্য সাধারনত আসে বিভিন্ন সরবারহকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হতে। তাই এ সকল খাবার কী কী উপাদান দ্বারা  তৈরি তা জানা সম্ভব নয়। বিমানের খাদ্যর এলার্জি থেকে বাঁচতে রোগীকে সাথে এন্টি এলার্জিক ইনজেকশান রাখতে হবে। বিমান কর্তৃপক্ষের সাথে আগে থেকেই আলাপ আলোচনা করতে হবে যাতে রোগীর প্রয়োজনের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। বিমানের ভিতরের বায়ু খুবই শুষ্ক। রোগীর নাকের ভেতরের অংশ আদ্র বা নরম রাখার জন্য নাকে ১ ঘন্টা পর পর স্যালাইন স্প্রে করতে হবে। যে সকল অ্যাজমা রোগীদের সাইনোসাইটিস ও কানের সমস্যা রয়েছে তারা বিমানে ভ্রমণের সময় অত্যাধিক যন্ত্রণা ভোগ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে তারা প্রদাহ বিরোধী স্প্রে করতে পারেন। জাহাজে চলাচলকালে হাঁপানি রোগীদের জন্য পরামর্শ জাহাজে ভ্রমণের সময় শ্বাসকষ্টের রোগীরেদ সাথে করে এপিনেফ্রেনি ইনজেকশন রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে হাঁপানি রোগীদের যে ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি খেয়াল রাখতে হবে তা হল জাহাজে যাত্রীদের জন্য সুচিকিৎসা স্বাস্থ্যসেবা পর্যাপ্ত কিনা।

পরজীবী ও ছত্রাক দ্বারা দুষিত ধুলোর কারণে এলার্জিজনিত অ্যাজমার প্রকোপ বাড়ে। আর এই ধুলো মিশে থাকে ঠান্ডা বা স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায়। জাহাজে ভ্রমণকালে যাত্রীদের বিভিন্ন জলবায়ু ও আবহাওয়ার সম্মুখীণ হতে হয়, সেক্ষেত্রে অ্যাজমা রোগীদের সাবধান থাকতে হবে। এছাড়া উষ্ণ ও আদ্র আবহাওয়া থেকেও রোগীদের সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এতে থাকে বায়ুবাহিত ছত্রাক, ফুলের রেণু ও পরজীবি।

অ্যাজমা রোগীর ভ্রমণকালে যে স্থানে থাকবে সে স্থান সম্পর্কে সাবধানতা

ভ্রমণের সময় বেশির ভাগ মানুষকেই হোটেল থাকতে হয়। সেক্ষেত্রে হাঁপানি রোগীকে এলার্জি প্রূফ কক্ষে থাকতে হবে। এতে করে রোগী অ্যাজমার প্র্রকোপ বৃদ্ধিকারী অ্যালার্জেনসমূহ যেমন- ঘরের মাদুর,  কার্পেট, পাপোষ জমে থাকা ধুলোবালি, ছত্রাক ও মাইট নামক অর্থোপৎ জীব থেকে বাচতে পারে। কর্তৃপক্ষকে আগে থেকেই সর্তক করতে হবে যাতে ঘরে বিড়াল বা ইঁদুর প্রবেশ করতে না পারে। কক্ষের চাদর ও বালিশ নিজেরা নিয়ে গেলে ভাল হয়। ঘরের যাতে পর্যাপ্ত রৌদ্র প্রবেশ করতে পারে সেদিকে  লক্ষ্য রাখতে হবে। সুইমিংপুল থেকে দূরে হাকা ভাল। ঘরে প্রবেশের পুর্বে এর দরজা জানালা কিছুক্ষণের জন্য খুলে রাখলে ভাল।

এছাড়াও হাঁপানী রোগীদের বা শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় হিসাবে আরো একটি সতর্কতা পালনীয়, যেমন – কারও বাড়িতে ভ্রমণের পূর্বে লক্ষ্য রাখতে হবে সে বাড়িতে পোষা প্রাণী আছে কিনা ? কারণ পোষা প্রাণীদের লোম, লালা ও প্রস্রাবে থাকে প্রচুর ছত্রাক। যা কিনা অ্যাজমা রোগীদের জন্য খুবই মারাত্মক। এ জাতীয় রোগীদের বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানের খাবার  এড়িয়ে চলতে পারলে ভাল। কারণ এ সকল খাদ্য বিভিন্ন আলার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান দ্বারা তৈরি হতে পারে। এছাড়াও অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগীদের খেলাধুলা, ক্যাম্পিং কিং ইত্যাদি বিভিন্ন রকম বিষয় বা শ্বাসকষ্টের প্রকোপ বাড়াতে পারে সে সকল বিষয়    এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ বেশি  রৌদ্রের ফলেও অ্যাজমা বেড়ে যেতে পারে। সর্বোপরি, অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগীদের ভ্রমণ কালে তাদের প্রয়োজণীয় ওষুধ এন্টিহিস্টামিন,  ব্রংকোডাইলেটর, নিজে পুশ করার মত এপিনেফ্রিন ইনজেকশন এবং কর্টিকোষ্টেরোড সঙ্গে রাখতে হবে। ওষুধগুলো এমন জায়গায় রাখতে হবে যাতে প্রয়োজনের সময় খুব দ্রুত সেগুলো পাওয়া যায়। নিজের দেশ ছেড়ে অন্য কোন দেশে গেলে সেক্ষেত্রে পোর্টেবল নেবুলাইজার নিতে হবে। ওষুধ কেবল সঙ্গে নিলেই হবে না, সেগুলো নিয়ম করে সেবন করতে হবে। কোন অ্যাজমা রোগী যদি নিশ্চিন্তে ভ্রমণ করতে চান, তবে তার জন্য  সবচেয়ে শ্রেয় হবে ভ্রমণের পূর্বে অ্যাজমা বা এলার্জি বিশেষজ্ঞের নিকট হতে সঠিক পরামর্শ গ্রহণ করা। এতে করে হাঁপানিতে আক্রান্ত ভ্রমণকারীর যাত্রা হবে সুনিশ্চিত ও আনন্দদায়ক।

অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোস্তফা হোসেন

বক্ষ্যব্যাধি বিশেষজ্ঞ